ঢাকা, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বন্যায় নেত্রকোনায় ভেসে গেছে ৮ কোটি টাকার মাছ

প্রকাশনার সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৮ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮

হাওর ও পাহাড় ঘেরা নেত্রকোনা জেলা। এ অঞ্চলের অর্থনীতির চালিকাশক্তি মাছ এবং ধান। কিন্তু অসময়ে আশ্বিনের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ ও ধান চাষে। এতে জেলার পাঁচ উপজেলায় ১ হাজার ৪৮০ টি পুকুর ও মাছের ঘের থেকে ভেসে গেছে। যা টাকার পরিমাণে আট কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ টাকা। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলাটিতে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ৮৪ হাজার ১৬৫ হেক্টর। এতে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় এক লাখ ১০ টন। যার মধ্যে ছোটবড় ৮৯টি হাওরে ৪০ শতাংশ, খাল-বিল ও নদ-নদীতে ১৫ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়। বাকি ৪৫ শতাংশ মাছ পুকুরে চাষ করা হয়। জেলায় পুকুরের সংখ্যা ৬০ হাজার ১০২টি। আর মাছচাষির সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৩৮ জন।

জেলায় মোট উৎপাদিত মাছের অর্ধেক ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত সপ্তাহে নেত্রকোনার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দেয়।

সূত্র বলছে, বন্যাদুর্গত এই জেলায় ৩১২ দশমিক ৫৯ হেক্টর জমিতে অন্তত এক হাজার ৪৮০টি পুকুর ও খামারের ৭২৩ দশমিক ৪৩ টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ কারণে ৮৯৬ জন মাছ চাষির প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে শুধু মাছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ টাকা। এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে আরও এক কোটি ২১ লাখ টাকা।

তবে চাষিদের দাবি, মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও সদর উপজেলায়। সদরের ৯৬৩টি ও কলমাকান্দায় ৩২২টি পুকুর ডুবে গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেকে।

প্রফেসার তাহেরুল ইসলামের মৎস্য খামারে কাজ করা আনিছ মিয়া বলেন, হঠাৎ করে রাতে কংস নদীর পাড় ভেঙে পুকুরের ওপর দিয়ে পানি যেতে শুরু করে। জাল দিয়েও পুকুরে মাছ আটকে রাখা সম্ভব হয়নি, সব মাছ চোখের সামনে পানিতে ভেসে গেছে।

তিনি বলেন, এখান থেকে মাছ বিক্রি করলে আমাদের বেতন হয়। যেহেতু মালিকের অনেক লোকসান হয়েছে জানি না এখন তিনি কি করবেন। নতুন করে মাছ চাষ না করা গেলে, আমরাও বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদে পড়বো এবং মালিকও বিপদে পড়বে।

সদর উপজেলার দশধার এলাকার মৎস্যচাষি হারিস মিয়া বলেন, মাছ চাষ আমার প্রধান ব্যবসা। এবছর পাঁচটি পুকুরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ চাষ করেছি কিন্তু বন্যায় সকল টাকা পানির সাথে মিশে গেছে।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, আকস্মিক বন্যায় মৎস্য সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তথ্য নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি আছেন। ত্রাণ সহায়তাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে সম্মিলিত সহযোগিতায় বিপদ কেটে উঠা যাবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ