ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তিন যুগেও সবজির এমন ঊর্ধ্বমূল্য দেখেননি ব্যবসায়ী মজিবর 

প্রকাশনার সময়: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৫৩

বয়সের প্রায় সিংহভাগ সময় ধরেই কাঁচা মালের ব্যবসা করছেন মজিবর শিকদার। বার্ধক্যের ভাড়ে শরীরের তেজ দীপ্ততা কমলেও এ পেশাতেই নিয়োজিত আছেন তিনি। এখনো ভ্যানযোগে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা হিসেবেই বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। সর্বদা মিষ্টিমুখে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার কারণেই অনেকের প্রিয় সবজি দোকানি এ মজিবর। তবে দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যবসায়ী জীবনে এমন লাগামহীন সবজির দাম আগে কখনো দেখেননি বলে ক্রেতাদের মন জোগাতে অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিনি। বলছেন, হঠাৎ একযোগে সবজির বাজারে এমন অস্থিরতা ছাপিয়ে গেছে তার আগে সব অভিজ্ঞতা।

আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল থেকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের সরেজমিন ঘুরে কথা হলে এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেন এ দোকানি।

তার ভাষ্যমতে, এর আগেও অনেক সময় প্রকারভেদে বিভিন্ন সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সম্প্রতি সময়ে কাঁচা মালের ঊর্ধ্বমুখী বাজার মোটেই পড়তির দিকে নেই। সব শাকসবজির মূল্যই বৃদ্ধি পেয়েছে একযোগে। ফলে অধিকাংশ ক্রেতারা দাম শুনেই মনোক্ষুণ্ন হচ্ছেন। কেউ কেউ রাগান্বিত হয়ে চলেও যান সবজি না কিনে বললেন মজিবর। তিনি বলেন, আজ সকালে খরচসহ কাঁচকলা কিনতে হয়েছে ১২ টাকা পিস। আর ৫০ টাকার বেশি হালি প্রতি দাম হাঁকালে ক্রেতারা নিতে চায় না। মাত্র দুই টাকা হালিতে ব্যবসা করেও কাস্টমারের মন রক্ষা করা কঠিন।

অন্য এক ব্যবসায়ী এতিমখানা এলাকার দোকানি হেলাল গাজী জানান, ৮০ টাকারও বেশি খরচসহ লালশাক কিনতে হয়েছে। আর বিক্রি করছেন ১০০ টাকায়। লাগামহীন বাজারে তেমন বিক্রিও হচ্ছে না। এদিকে কলাপাড়ার বৃহৎ সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে লাউ প্রতিপিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, টমেটো ৩০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, লাউ শাকের ডগা ৪০ টাকা, বাঁধা কপি ৮০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা, বেগুন ১৩০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪৫০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজি প্রায় ১০০ ছুঁই ছুঁই দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কমদামে মিলছে মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে পেঁপে। এছাড়া ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় সবজি ঢেড়ষ। এ বাজারের বিক্রেতা ইয়াছিন বলেন, ২৭০ টাকা দরে টমেটো কিনে বিক্রি করছি ৩০০ টাকায়, বরবটি ১১০ ও গাজর ১৮০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা পাইকারি কেনা এসেছে বলেন তিনি। এদিন দুপুরে কথা হয় সবজি কিনতে আসা রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। জানান, প্রায় আধাঘণ্টা সময় ধরে ঘুরেও সবজি কিনতে পারছেন না। তিনি বলেন, মিষ্টি কুমড়াও ৭০ টাকা কেজি তাই ৪০ টাকায় পুইশাক কিনে ফিরতে হচ্ছে ঘরে। তার অভিযোগ, এর আগে কখনো একযোগে সব সবজির দাম বাড়েনি। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষজন সবজিতে হাত লাগাতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশা চালক জানান, অন্য সব জিনিসের দাম বাড়লে গরিব মানুষের সমস্যা ছিল না। কারণ দামি জিনিস আমাদের মতো মানুষেরা কেনে কম। কিন্তু তরকারির (সবজি) দাম এমন ভাবে বাড়ছে এতে নিত্য আয়ের মানুষ কিনতে পারছে না। তিনি বলেন, এখন দাম নিয়ে কথা বলতেও ভয় লাগে। আমার নামটা লেইখেন না।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম জানান, সাড়া দেশেই সবজির মূল্য বৃদ্ধি। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূজার পরে তাদের কার্যক্রম শুরু হবে। কেউ যাতে অতিরিক্ত মূল্য নিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের নজর থাকবে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ