পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, শৃঙ্খলা ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে খাগড়াছড়ির সর্বস্থরের সাধারণ শিক্ষার্থী সমাজ।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে খাগড়াছড়ির সর্বস্থরের সাধারণ শিক্ষার্থী সমাজ।
সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের পক্ষে ছাত্র সংগঠক মো. সোহেল রানা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসান মুহাম্মদ সোহেল রানা। ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ির উপজাতীয় আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ সোহেল রানার বিচার দাবি করে। ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে ধর্ষিতা ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ মার্চ তারিখে সোহেল রানা ঢাকায় গ্রেফতার হন। এরপর তিনি কারাগারে ছিলেন।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাতেন মৃধার তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলো পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিলো। ওই ছাত্রী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়, তিনি কোন ধর্ষণের শিকার হননি। একটি পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিলো।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ থাকে, কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সোহেল রানা চাকরিতে বহাল হন। কিন্তু, তাতে বাঁধা দিচ্ছিলো পাহাড়ি একটি আঞ্চলিক সংগঠন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ১ অক্টোবর তিনি রিলিজ অর্ডার নিতে বিদ্যালয়ে যান। সেখানে একই সময়ে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ এনে উপজাতিরা শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে, যা সম্পূর্ণ উপজাতিদের সুপরিকল্পিত। পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিরাজমান পরিস্থিতিকে আরও তুঙ্গে তুলে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে নিজেদের আবদ্ধ রেখে দেশভাগের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আরও সুদৃঢ় করতে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। বাঙালিদের উপর একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ আর অপবাদের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালানো হচ্ছে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সহিংসতা ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। খাগড়াছড়িতে ১৮ সেপ্টেম্বর মামুন হত্যা, ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে প্রথমে হামলাকারী ও ফাঁকা গুলি করা পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা, ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারের আড়ালে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রথমে বাঙালিদের দোকানপাটে হামলা, মসজিদে হামলাকারী ও বাস, ট্রাক, সিএনজি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া উপজাতি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা তৈরিতে মূল উস্কানি দাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে বলে স্মারকলিপিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়। অন্যথায় লাগাতার অবরোধ, হরতাল সহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দেওয়া হবে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ