‘নিম্নচাপের প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না তিনি। সপ্তাহে যে কয়দিন কাজ হয় তাই দিয়ে কোন মত ডালে ভাতে দিন কাটাই দিচ্ছি। কারণ সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই পাঁচশত টেকা। সেই টেকায় বাজার করতি লাগলি ২ডি বাগুন, কয়ডা পোটল, আর আধা সের আলু কিনতিই মজুড়ির প্রায় সব টেকাই শ্যাষ হয়্যে যায়। বনবাদারের লতাপাতা ছাড়া আমাদের খেয়ে বাঁচার আর কোন উপায় নাই।’
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা সবজির বাজার দাশুড়িয়ায় বাজারের ব্যাগে আধাকেজি আলু আর তিনটা বেগুন কিনে দোকনির কাছে এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন গৃহনির্মাণ শ্রমিক বাবর আলী (৪৫)।
আলাপকালে তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে আমাদের মত লোকেরা আর কয়দিন বাদে না খেয়ে মরব! কারণ যা কামাই করি তাতে তো সংসারের চাল কিনতেই শেষ। তেল নুন কিনব কি দিয়ে।
কয়েকদিনের দরদাম যাচাই করে উপজেলার একাধিক সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৬০/২০০ টাকা, ফুলকপি ৮০, করলা ৮০, লাউ প্রতিটি ৬০, পেঁপে ২৫/৩০ কেজি, বরবটি ৭০, কচু ৬০, বেগুন ৮০, পটল ৪০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৬০, ওল ১২০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা (প্রতি কেজি), আলু ৫০/৫৫, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ২২০/২৬০, আদা ৩০০, এবং ঢেঁড়স ৩০ টাকা প্রতি কেজি কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা, পুঁই শাক আঁটি ২০/২৫ টাকা, লাল ও সাদা শাকের আটি ১০ টাকা।
মাছের বাজারেও নেই কোন সুসংবাদ, ১ কেজি ওজনের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০/৩৮০ টাকা কেজিতে, ৬ পিচে কেজি ইলিশের কেজি ৮৫০ থেকে শুরু, পাঙ্গাস ২২০, সিলভার ১৮০/২২০ টাকা (১ কেজি), তেলাপিয়া ২৭০, ছোট রুই ২৮০ থেকে শুরু, ছোট চিংড়ি ১০০০ টাকা, গুড়া মাছ ৬০০ থেকে শুরু, টেংরা মাছের কেজি চলছে ৪৫০ টাকা।
ঈশ্বরদী পৌর কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ফরজ আলী বলেন, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে ঈশ্বরদীর অনেক সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। যেসব কৃষকরা আগে মাল আনত ভ্যান ভরে তারা এখন মাল আনে ব্যাগে করে সাইকেলের দিয়ে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা।
বাজার করতে আসা অটোচালক মো. লিটন বলেন, প্রতিদিনই সবজির দাম কিছু না কিছু বাড়তেই আছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা সংসার চালাবো কি করে?
দাশুড়িয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির আমদানি একেবারেই কম। তা ছাড়া অনেক কৃষকের ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানি কম থাকায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।
উপজেলা বড়ইচারা বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, চারদিকের সব পানিতে ডুবে শেষ। এখন যা আছে তা দিয়েই কৃষক পুষায়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা বাজারে কোন মালই কমদামে বেচে না। তাই আমরাও কমদামে কিনতি পারিনি। বেচতিও পারিনি।
তবে বছরজুড়েই উচ্চমূখী দ্রব্যমূল্যের গ্যারাকলে হাসফাস করছে দেশের মানুষ। এতে মধ্যবিত্তের জীবনযাপনে কোন ব্যাঘাত না ঘটলেও উচ্চমূল্যের উত্তাপে পুড়ছে খেটে খাওয়া দিনমজুর আর লজ্জায় মুখটিপে সংসারের ঘানি টানা টানা মধ্যবিত্তরা।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ