সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা তৈরির কারিগররা। চলতি বছরে এই উপজেলায় ৪৫টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছের তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ সান্যাল। দুর্গোৎসব সুষ্ঠ, সুন্দর ও নির্বিঘ্নে শেষ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে, পূজার আর বেশি দেরি নাই তাই প্রতিমা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কারিগর কালাচাঁন সুত্রধর বলেন, ছোট বেলা থেকেই এই পেশাতে আছি, জীবনের বেশিভাগ সময়ই প্রতিমা তৈরির কাজ করে কাটিয়ে দিলাম, কিন্তু শিল্পির মর্যাদা আর পেলাম না।
তিনি বলেন, সাধারণত বাড়িতেই প্রতিমা তৈরি করি। শুধু রং এর কাজটা যে মন্দিরে পূজা হবে সেখানে গিয়ে করে দেই। কিন্তু যেখানে যোগাযোগ খারাপ সেখানে গিয়েই সমস্ত কাজ করে দেই। বাজারে রং সহ সকল জিনিসপত্রের দামই বেশি, সেই তুলনায় পরিশ্রমের দাম বাড়ছে না তাই এই পেশায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কারিগরের মেয়ে রানী ভবানী কলেজের মার্কেটিং'এ অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী নীপা রানী সুত্রধর বলেন, পরিবারের সদস্যদের প্রতিমা তৈরি করা দেখে দেখেই বড় হয়েছি, যা দেখতে বেশ ভালোই লাগে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীর স্বীকৃতির পাশাপাশি আর্থিক প্রনোদনা দেবার দাবি করছি।
কারিগরের স্ত্রী বিমলা রানী সুত্রধর বলেন, দেবীদুর্গা দুর্গতিনাশীনী। দেবীদুর্গা কখনো দশভূজা (দশটি হাত থাকায়, একেক হাতে একেক অস্ত্র ও আর্শিবাদ) কখনো আদ্যাশক্তি মহামায়া, কখনো বা উমা নামে পরিচিতা।
কারিগর বিশ্বজিদ সূত্রধর বলেন, পূজার আয়োজকরা যদি পূর্ব থেকে প্রতিমা তৈরির চাহিদা দিত, তাহলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হত। প্রতিমা তৈরির উপকরণ খড়, বাঁশ, কাঠ, দড়ি, রং ইত্যাদির দাম বাড়লেও পরিশ্রমের দাম সে তুলনায় বাড়েনি।
তিনি বলেন, হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী মনে করা হয়, দেবীর দুর্গার মর্তে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছরটা পৃথিবী বাসীর কেমন কাটবে।
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, প্রতি বছরই দেবী আসে যায় কিন্ত আমাদের ভাগ্যন্নয়ন হয় না। আর এ কারণে অনেকে পৈতৃক পেশা পাল্টিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে।
এ কারিগর বলেন, এখানে আমরা ৩ জন কারিগর প্রতিমা তৈরির কাজ করি। এবছর ৫টি প্রতিমার চাহিদা পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ১২/১৫ দিন সময় লাগে এবং প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেই। তবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরী করতে গেলে খরচ কিছুটা বেড়ে যায়।
তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ সান্যাল বলেন, এ বছর এই উপজেলায় মোট ৪৫ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে তাড়াশ পৌরসভায় ও সদর ইউনিয়ন মিলে -১৫টি, মাধাইনগর ইউনিয়নে -৬টি, দেশীগ্রাম ইউনিয়নে -৯টি, তালম ইউনিয়নে -৮টি, বারুহাঁস ইউনিয়নে-৪টি, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নে-২টি, নওগাঁ ইউনিয়নে-১টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
তাড়াশ থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. আসলাম হেসেন বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও নিবিঘ্নে করতে পুলিশি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এ ছাড়াও সনাতন ধর্মের লোকজন যাতে নির্বিগ্নে পূজা উদযাপন করতে পারেন সে জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছর ২০২৪ সালে মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, বুধবার, মহাপঞ্চমী - ৮ অক্টোবর, মহাষষ্ঠী- ৯ অক্টোবর, মহাসপ্তমী - ১০ অক্টোবর, মহাঅষ্টমী - ১১ অক্টোবর, মহানবমী - ১১ অক্টোবর এবং মহাদশমী - ১২ অক্টোবর।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ