ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চুরির আশঙ্কায় বজ্রপাতে মৃতদের কবর ঢালাই

প্রকাশনার সময়: ০২ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৬

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহতদের মরদেহ চুরি ঠেকাতে রড, সিমেন্ট, বালুর মাধ্যমে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে কবর বাধায়ের হিড়িক চলছে। এ যেন চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্পের মতো। মরদেহ চুরি যাবার শঙ্কায় কবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির ভেতর ও আঙ্গিনায়। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক ধরনের অন্ধবিশ্বাস ও সামাজিক কুসংস্কার। যার কোন ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আর জেলাবাসীর দাবি, বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার।

বাড়ির আঙ্গিনায় কবরের সারি। গেলো ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়পুর ডাইলপাড়া এলাকায় বজ্রপাতে নিহত একই পরিবারের ৬ জনসহ ১৭ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির ভেতরে ও সামনের আঙ্গিনায়। মরদেহ চুরি ঠেকাতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে এবং চারপাশ ইটের প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে কবরগুলোকে। একই চিত্র জেলার অনেক জায়গায় রয়েছে।

এলাকায় বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশ চুরির বিষয়টি প্রচার থাকলেও; চুরি হয়েছে এমন কোন তথ্য দিতে পারেনি কেউ। আর এসব লাশ কি কাজে লাগে তাও জানেন না এলাকাবাসী। তবে শুনা কথায় বিশ্বাস করে এমন কাজে হুমড়ি খাচ্ছে গ্রামবাসীরা।

নুরুল ইসলাম জানান, কবরগুলো বাধার কারণ হলো আমরা আগে থেকে শুনে আসছি বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশ নাকি চোরে চুরি করে। চুরি ঠেকাতে ঢালাই দিয়ে বাড়ির সামনে কবর দেওয়া হচ্ছে। যাতে চোরে চুরি করতে না পারে। গোরস্থানে কবর দিলে চুরির শঙ্কা থাকে। তাই এমনভাবে কবর দেওয়া হচ্ছে।

ডাইলপাড়ার নজরুল ইসলাম জানান, আমরা দেখে আসছি আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশকে ঢালাই বা বাড়ির ভেতরে কবর দেওয়া হয়। তবে আমরা কখনোই দেখি নাই যে লাশ চুরি হয়েছে। শুনেছি যে লাশ চুরি করে কি কাজে যেন লাগায়। শুনা কথায় বিশ্বাস করেই কবরগুলো বাধা করা হয়েছে।

তারেক জানান, বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশ চুরি হয় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি অত্র এলাকায়। শুধু মানুষের মুখে শুনা কথায় এমন কাজ করেছি। মনকে শান্ত দেয়ার জন্য। আমরা সবাই গুজবে কান দিয়ে চলছি।

জালাম উদ্দীন জানান, বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাড়ির ভেতরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশগুলোকে কবর দেওয়া সমাজে কুসংস্কার হিসেবে ছড়িয়ে গেছে। এমন ধরনের কবর দেওয়ার বিষয়টি কোরআন ও হাদিসে কোন নাই। শুনা কথায় বিশ্বাস করেই এমনভাবে কবর দিচ্ছে স্বজনরা। এটা থেকে বের হয়ে না আসলে এমনভাবে চলতে থাকবে। এলাকাবাসীর দাবি, বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়ার দ্রুত প্রয়োজন।

সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, বজ্রপাতে নিহতদের মরদেহ চুরি হওয়া কঙ্কাল ব্যবহারে আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য বা বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ভাবে ভিত্তি নেই। সাধারণভাবে মারা যাওয়া মরদেহ কঙ্কালের মতো। আলাদা কোন কাজ হয় না। শুনা কথায় মানুষ বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাড়ির ভেতরে কবর দেয়। এগুলো মানুষের সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধরনা ও অন্ধবিশ্বাস এবং সামাজিক কুসংস্কার।

নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রজন আলী জানান, লাশ চুরি ঘটনা অন্ধবিশ্বাস এবং মিথ্যা কথা। ধর্মীয় বা বৈজ্ঞানিক কোন মিল নেই। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির শরীরে কিছু মূল্যবান ধাতু তৈরি হয় এমনটা থেকে নিহত ব্যক্তির লাশ চুরি হয়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ধারণা। সকল চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা একমত। বজ্রপাতের মারা যাওয়া মরদেহতে কোন কিছুই থাকে না। তিনি আরো জানান, এগুলো মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও অন্ধবিশ্বাস এবং সামাজিক কুসংস্কার। তাই এগুলো থেকে দুরে থাকতে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শের দরকার।

সরকারি হিসেবে মতে ২০২০ সালে জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছে ১৪ জন এবং ২০২১ সালে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৩২ জন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ