ঢাকা, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজশাহী নগরীর ৪ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেনাকাটার নামে হরিলুট

প্রকাশনার সময়: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৭

রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তরের অধীনে পরিচালিত রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেনাকাটার নামে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। কেনাকাটার নামে লাখ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। আদৌ অধিকাংশ আসবাবপত্র কেনায় হয়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রে কিছুই কেনা হয়নি। কিন্তু একেকটি কেন্দ্রের নামে সাড়ে ১৩ লাখ টাকারও বেশি বিল উত্তোলন করে লোপাট করা হয়েছে।

এ নিয়ে চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিস্তার করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি কেনাকাটার নামে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করা হলে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সেই বিল ভাউচারে স্বাক্ষরও করেননি। এ নিয়ে ওইসব কর্মকর্তাদের বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্যমতে, গত অর্থ বছরে রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য মোট ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ১৯৮ টাকার ওষুধসহ বিভিন্ন মালামাল কেনা হয়। চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি হলো আরবান ডিসপেন্সসারী এবং একটি বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এগুলো হলো- পবা-১ আরবান ডিসপেনসারি, রানীনগর আরবান ডিসপেনসারি, শিরোইল আরবান ডিসপেনসারি ও বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

এই চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য গত অর্থ বছরে ওষুধপত্র ছাড়াও ৫২ হাজার ৫১০ টাকার ১৫টি বিপি মেশিন, ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৮ টাকার গ্লোভস, ৭৯ হাজার ১১০ টাকার ১৫টি নেবুলাইজার মেশিন, তিনটি কেন্দ্রের জন্য ৮২ হাজার ৪৫৫ টাকার তিনটি রেফ্রিজারেটর, চারটি কেন্দ্রের জন্য ৩৪ হাজার ৪৫০ টাকার ৩৫টি স্টেথোস্কোপ, ১৮ হাজার ১৭৯ টাকার থার্মোমিটার এবং ৪৮ হাজার ৩৭৫ টাকার ওয়েট মেশিন কেনা হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

তবে সরেজমিন ঘুরে কোনো কেন্দ্রেই এসব মালামাল নতুন পাওয়া যায়নি। গত অর্থ বছরে এসব মালামালের একটিও কেনা হয়নি বলেও দাবি করেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পবা-১ আরবান ডিসপেনসারির জন্য ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকার ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, ক্যামিক্যাল রি-এজেন্ট, লিনেন সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গজ, ব্যান্ডেজ তুলাসহ বিভিন্ন মালামাল কেনার নামে বিল উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে একটি রেফ্রিজারেটরও রয়েছে। কিন্তু আদৌ কোনো রেফিজারেটরসহ অন্যান্য তেমন কোনো মালামাল কেনা হয়নি। তবে সামান্য পরিমাণে কিছু ওষুধপত্র কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ‘কিছু ওষুধ তাদের কাছে সরবরাহ করা হলেও কোনো মালামাল দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভুয়া বিল-ভাউচার পাঠানো হয় রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে তাদের কাউকে কাউকে ম্যানেজ করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

নগরীর রানীনগর আরবান ডিসপেনসারির জন্যে একই জিনিসপত্র কেনার নামে ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকা কিন্তু সেখানেও কোনো রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য মালামাল কেনা হয়নি। সামান্য পরিমাণে কিছু ওষুধপত্র কেনা হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা গায়েব হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কেনাকাটার নামে সরকারি টাকা শুধু লোপাট হয়েছে। কোনো মালামাল বুঝে পাইনি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা বদলিও হুমকি দেন হয় রাজশাহী সিভির সার্জন কর্মকর্তা। এতে ভুয়া বিল-ভাউচারেই স্বাক্ষর করতে হয়।’

নগরীর শিরোইল আরবান ডিসপেনসারির জন্য ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ টাকার ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তর। কিন্তু সেখানেও কোনো জিনিসপত্র কেনা হয়নি। এমনকি রেফ্রিজারেটরও কেনা হয়নি।

ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ‘তারা কোনো মালামাল পাননি। কিন্তু কেনাকাটার নামে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করা হয়।’

নগরীর রাজশাহী কলেজের সামনে অবস্থিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য রেফ্রিজারেটর ছাড়া অন্যান্য ওষুধপত্র ও মালামাল সামগ্রী কেনা হয়েছে। এখানে ব্যয় করা হয়েছে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮২২ টাকা। কিন্তু এখানে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো মালামাল পৌঁছানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

নগরীর স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের এখানে চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় তারা ওখানে গিয়ে কোনো কিছু না পেয়ে ঘুরে আসেন বলে জানিয়েছে আবু সাইদ নামের রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাক্তার আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে নাই কি কেনা হয়েছে কি কেনা হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব না। কিন্তু কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি সঠিক নয়।’ তবে কোনো অনিময় হয়নি বলে জানান তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ