কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট তানজিম সরোয়ার নির্জরের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত নির্জরকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
জানাজায় ঘাটাইল এরিয়ার ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান, যমুনা ক্যান্টেনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে নিহত নির্জরের মরদেহ ডিস্ট্রিক গেইট এলাকার হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত তানজিম সরোয়ার নির্জরের বাবার নাম সারোয়ার জাহান ও মাতা নাজমা বেগম। তিনি তাদের একমাত্র ছেলে। তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে। তার মৃত্যু খবরে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
নিহত সেনা কর্মকর্তার মা ও স্বজনরা জানান, পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপন করে ৮২ তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গত ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন। পরিবারের লোকজন সেনা কর্মকর্তা নির্জরের হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি বলেন, আমার ভাই বললো আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো, অভিযান শেষ করে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবনি চিন্তা করো না। আর আমার ভাই কল দিলো না।
নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান বলেন, আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বললো মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো, শেষ করে তারপর কল দিবনি, আমার ছেলে আর কল দিলো না। ছেলে হত্যার বিচার দাবি করছি।
নির্জনের বাবা সারোয়ার জাহান বলেন, সকালে কল আসে নির্জন মারা গেছে, আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না, কি থেকে কি হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিছে, ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিলো আমার ছেলে, সেও এখন হারিয়ে গেলো।
ঘাটাইল সেনানিবাসের ১৯ পদাতিক ডিভিশন’র জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, আজ ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অভিযান যায়। পরে ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন।
এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা নির্জনকে ছুরিকাঘাত করলে গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ