ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে কান ধরে ওঠবস, পুলিশ হেফাজতে যুবক

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০৪

সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন এক নারী। হঠাৎ পেছন থেকে ছুটে গিয়ে এক যুবক তাকে থামান। যুবকের হাতে ছিল লাঠি। লাঠির ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করতে বলা হয়। পুরো বিষয়টি ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করতে থাকা আরেক মহিলা ভুক্তভোগী নারীর মুখের মাস্ক টেনে খুলে ফেলেন। এরপর রোষানল থেকে বাঁচতে ওই নারী কান ধরতে বাধ্য হন। এ সময় চারপাশে মানুষের ভিড় জমে যায়। অনেকে অশালীন গালাগাল করেন। কেউ কেউ কান ধরে ওঠবসের গণনাও করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও করে তা ছেড়ে দেওয়া হয় ফেসবুকে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

জানা গেছে, ঘটনাটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের। এ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ফেসবুকে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। কেউ কেউ ওই নারীকে ‘যৌনকর্মী’ আখ্যা দিয়ে এমন ‘শাস্তি’ প্রযোজ্য বলে সাফাই গাইতে চেষ্টা করলেও অধিকাংশ নেটিজেনরাই এ বিকৃত ও বেআইনি ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত লাঠি হাতে থাকা যে যুবকের মাধ্যমে, তাকেও হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ওই যুবকের নাম ফারুকুল ইসলাম। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায়।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ। ডিবির ওসি জানান, সৈকতে এক নারীকে কান ধরিয়ে উল্লাস করা অভিযুক্ত যুবক ফারুকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনো আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা ছাড়াও ফেসবুকে নারী হেনস্থার আরও দুটি ভিডিও ছড়িয়েছে। এর একটিতে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে বিচ চেয়ারে বসা এক নারীকে একদল যুবক হঠাৎ ঘিরে ধরে গালাগাল করছে এবং তাকে সেখান থেকে উঠে যেতে নির্দেশ দিচ্ছে। একপর্যায়ে তাকে পেটানোর ভয় দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে যেতে বাধ্য করা হয়। সেখানেও কাঠের লাঠি হাতে ফারুকুল ইসলামকে দেখা যায়।

তৃতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কড়াই রেস্তোরাঁর সামনে একটি ঘরে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের কাছে এক নারী ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় তার মোবাইল ফোনটি চাচ্ছেন। তিনি উপস্থিত জনতার কাছে বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন এবং বলছেন, তার মোবাইল ফোনটা ফেরত দিলে তিনি এখনই টিকিট কেটে সেখান থেকে চলে যাবেন। সেই ভিডিওতেও ফারুকুলকে দেখা গেছে।

নেটিজেনরা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্র বা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে এখন অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বা আইনপ্রয়োগকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম বলেন, সৈকতে নারীকে পেটানো বা হেনস্থা করা যুবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নয়। এমন অপরাধের সঙ্গে আমাদের কেউও যদি জড়িত থাকে তবে তাকে যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, তারা কোনো তরুণের এমন কোনোপ্রকার আচরণ সমর্থন করেন না।

কক্সবাজারের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেছিলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষকে ব্যবসায়ী ও কয়েকজন ছাত্র মিলে সৈকত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে ও পর্যটকদের নানাভাবে বিরক্ত করছে— এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। যদিও আমরা এ ব্যাপারে আরও খোঁজখবর নিচ্ছি।’

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ