রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগির চাপ কমলেও মৃত্যু এখনো থামেনি। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। কিন্তু বেড়েছে করোনা উপসর্গে মৃত্যু।
গত সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে রামেকে করোনা উপসর্গে করোনার চেয়ে দ্বিগুন রোগী মারা গেছেন। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জন। কিন্তু এই একমাসে করোনা উপসর্গে মারা গেছেন ১১০ জন রোগী।
হাসপাতালে করোনায় নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। কিন্তু থামছে না করোনা উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকের করোনা ইউনিটে উপসর্গ নিয়ে দুইজন রোগী মারা গেছেন। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে এদিন কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত করোনা উপসর্গে হাসপাতালে দুইজন রোগী মারা গেছেন।
এদিন রামেকের ২৪০ করোনা ডেডিকেটেড শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে ৮৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ।
রামেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে গত মে মাসের পর থেকে এই প্রথম করোনা ও উপসর্গে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০ এর নিচে নেমে এসেছে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে উপসর্গে মৃত্যু দ্বিগুণের বেশি। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী কমে যাওয়ার কারণে গত আগস্ট মাস থেকেই শয্যা কমিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে করোনা ডেডিকেটেড শয্যা করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৫১৩টি। এরপর আগস্টে তা কয়েক দফা কমিয়ে করা হয় ২৮৬টি।
সেপ্টেম্বরে তা কমিয়ে ২৪০ শয্যা করা হয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গের রোগী বাড়তে থাকে। প্রথমে রোগী বেশি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের। জুনে এসে পুরো রাজশাহী বিভাগের রোগীতে হাসপাতালে রোগী জায়গা সংকুলান করা কঠিন হয়ে পড়ে। জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর জায়গা দিতে হিমশিম খান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এই হাসপাতালটিতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ কমতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিনে এসে রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে নেমে আসে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত জুন-জুলাই মাসে রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫-এর মধ্যে রোগীর মৃত্যু হচ্ছিল। তবে আগস্ট মাসে এসে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ১০-এর নিচে আসে এবং সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও কমে গেছে। হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত জুন মাসে মারা গেছেন ৩৪৬ জন।
জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৩৫ জন। আগস্ট মাসে মারা গেছেন ৩৫৪ জন রোগী। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছেন ১৬৪ জন, যা আগস্টের তুলনায় অনেক কম। তবে সেপ্টেম্বর মাসে করোনায় মারা গেছেন মাত্র ৪৩ জন। কিন্তু করোনা উপসর্গে মারা গেছেন ১১০ জন। করোনা থেকে সুস্থ হলেও পরবর্তী জটিলতায় মারা গেছেন আরও ১১ জন। হাসপাতালে সেপ্টেম্বরে করোনার তুলনায় উপসর্গে দ্বিগুণের বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, গত মে মাসের পর গত বৃহস্পতিবার প্রথম রামেকের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচে নেমে এসেছে। হাসপাতালের আরেকটি করোনা ওয়ার্ড শনিবার কমিয়ে দেওয়া হবে। ওই ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪১টি। এটি কমানো হলে রামেকের করোনা ওয়ার্ডে মোট শয্যা কমে হবে দাঁড়াবে ১৯৯টিতে। হাসপাতালের ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে করোনার ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়াবে ৬টি। হাসপাতালে আগের চেয়ে করোনা রোগী কমার কারণে সাধারণ রোগীদের ভিড় বেড়েছে বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ