পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি। প্রায় সাড়ে ৫ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিন শত বছরেরও বেশি পুরানো এ জমিদার বাড়িটির সাথে মিশে আছে এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য। যেমন আছে ঐতিহ্য তেমনই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশাল অট্টালিকাবহ জমিদার বাড়ির দক্ষিণ দিকে বহমান রয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারা নদী। কালের সাক্ষী হলেও সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িটির সৌন্দর্য।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে পাইলগাঁও গ্রামে দেখা যায়, জমিদার বাড়ির প্রবেশ ধারে জমিদার পরিবারের পোস্ট অফিস, বড় পুকুর, ভোগ মন্দির জমিদারদের পারিবারিক মহল। যদিও এ জমিদার বাড়িটি এখন অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবুও বর্তমান প্রজন্ম পরিবার নিয়ে তিনশত বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই ঘুরতে আসছেন। পর্যটকরা বেশিভাগই এ বাড়িতে অবস্থিত দুইটি বিশাল শান বাঁধানো দিঘী, একটি সুন্দর কাছারিঘর যেখানে জমিদার বাবু প্রজাদের বিচার কাজ পরিচালনা করতেন এবং সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের রাখার জন্য কারাগারটি দেখে আকৃষ্ট হন। এ অঞ্চলে আর কোনো পুরাকীর্তি না থাকায় এ বাড়িটিই ভ্রমণ পিপাসুদের মনের খোরাক জুগিয়ে আসছে।
জগন্নাথপুরের জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের কংগ্রেস পার্টির সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য। জমিদার বংশের কথা প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অচ্যূতচরণ চৌধুরী পাইলগাঁও’র জমিদার বংশের ‘রসময় বা রাসমোহন চৌধুরী’ হতে প্রাপ্ত সূত্রে লিখেছেন, পাইলগাঁওয়ে বহু পূর্বকালে পাল বংশীয় লোক বসবাস করত। ১৯১৩ সালে এই জমিদার বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ধঞ্জন ১৯২১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করেন রাজ মিস্ত্রী। প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে জমিদারি শাসনামলের পতন ঘটে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় জমিদাররা ভারতে চলে যান। তারপর থেকে পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়ি।
সংরক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়িটি জৌলস হারাতে চলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবাদীরা। প্রত্নত্ত অধিদপ্তর থেকে এ বাড়িটি সংস্কার করে ঐতিহ্য রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ভূমিকম্প প্রবণ সিলেটে ১৮শত শতাব্দীর ভূমিকম্পে সিলেটের অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনাগুলো হারিয়ে গেছে। এরপর যে কয়েকটি স্থাপনা টিকে আছে তার মধ্যে একটি পাইলগাঁও’র জমিদার বাড়ি। কিন্তু বর্তমানে অযত্নে অবহেলায় তাও নষ্ট হচ্ছে।
তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব ঐতিহ্য তুলে ধরতে বাংলাদেশ প্রত্নত্ত অধিদপ্তর থেকে এ বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ