মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

চাচাকে বাবা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন ভাতিজার

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৪০

নিজ পিতার নাম গোপন করে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন ভাতিজা। এ প্রতারণা করতে নতুন করে তৈরি করা হয় মৃত চাচার জাতীয় পরিচয় পত্র। এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়ায়।

অভিযুক্তের নাম বাবলু হোসেন (৩৯)। উপজেলার দায়ারামপুর ইউনিয়নের ডুমরাই (ঢাকাপাড়া) এলাকার মো. তৈয়ব আলীর (৭৭) ছেলে বাবলু।

জানা গেছে, এই প্রতারণা এবং কাজপত্র সংশোধনে বাবলুকে সাহায্য করেন সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও আজাদ হোসেন আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। ২০১৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকার গেজেট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাবলু হোসেনে জন্ম ১৯৮৫ সালে। ২০০৮ সালে তিনি ভোটার হন। জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০০৮ সালে তার পিতার নাম ছিল মো. তৈয়ব আলী এবং মাতা জরিনা বেগম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার লোভে ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করেন। তখন মো. তৈয়ব আলীর নাম পরিবর্তন করে চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখকে পিতা হিসেবে সংযোজন করেন। তবে, জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন উভয় স্থানে মাতার নাম জরিনা বেগমই রাখেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ওই এলাকার মৃত আশোক আলীর ছেলে। স্থানীয়রা জানান, বাবলু হোসেনের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ১৯৭৯ সালে অবিবাহিত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর ৬ বছর পরে বাবলু হোসেনের জন্ম হয়। ব্যক্তি যাওয়ার ৬ বছর পরে কিভাবে পুত্রের জন্ম দিলেন, এই নিয়েও নানা মহলে উঠেছে প্রশ্ন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ও কোন ওয়ারিশ না থাকায় তার প্রাপ্য সম্মানি ভাতা পাওয়ার লোভে বাবলু হোসেন এই জালিয়াতির অশ্রয় নেন। সোনালি ব্যাংকের বাগাতিপাড়া শাখা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, বাবলু হোসেন নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা উত্তোলন করেন।

একই এলাকার বসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা (বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসর প্রাপ্ত অ্যাটেনডেন্ট) আনোয়ার হোসেন (৭৫) জানান, তিনি এবং আয়ুব আলী ছোটবেলা থেকেই একই সাথেই লেখাপড়া করেছেন। তারা উভয়ই ভারতের মিত্রবাহিনীর অধিনে ট্রেনিং করেছিলেন এবং ৭ নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। আয়ুব আলীর মৃত্যুর অনেক বছর পরে বাবলু হোসেনের জন্ম।

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সুরুজ আলী (৭৫) জানান, আয়ুব আলী সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। আয়ুব আলীর কোনো স্ত্রী, সন্তান ছিল না। তিনি ১৯৭৯ সালে মৃত্য বরণ করেন। বাবলু হোসেন আয়ুব আলীর ভাতিজা । ভাতার লোভে বাবলু হোসেন জাতীয় পরিচয় পত্র পরিবর্তন করেছেন, বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানেন।

একই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার আক্কাস আলী ঘটনার সত্যাতা নিশ্চত করে বলেন, বাবলু হোসেন জাতীয় পরিচয় পত্রে তার পিতার নাম পরিবর্তন করেছেন। সেই সময় সংশোধনীর কাগজপত্র ডিজিটাল না হওয়ায় হাতে লিখেই পাঠানো হতো। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলীর কোনো স্ত্রী, সন্তান না থাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসের লোকজনের সুপারিশেই সংশোধনী কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে বাবলু হোসেন বলেন, ছোটবেলায় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ আমাকে পালকপুত্র হিসেবে নেন। প্রথম জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল করে জন্মদাতা পিতার নাম তৈয়ব আলী দিয়ে ফেলি। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সঙ্গে পালক পুত্রের বিষয়টি বললে, তাদের সহায়তায় পিতার নাম সংশোধন করি।

বাগাতিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, বাবলু হোসেন জাতীয় পরিচয় যখন সংশোধন করেন তখন আজাদ হোসেন উপজেলা ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই সেই সময় বাবলু হোসেন এর কাজপত্র সংশোধনে সাহায্য করেন। সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। ২০১৯ সালে তার নাম গেজেট থেকে বাতিল হয় এবং ২০২৩ সালে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

আজাদ হোসেনকে এ বিষয়ে জিঙ্গাসা করা হলে তিনি জানান, তার শরীর খারাপ, কথা বলতে পারছেন না। আর সেই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন-না।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। কাগজপত্রাদি দেখে ব্যবস্থা নেবো।

নয়াশতাব্দী/একে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ