রাজশাহীর বাজারে উঠেছে নতুন পাট। এবার নতুন পাটের বাজার চাঙা। ফলে পাট বিক্রি করে হাসি মুখে ঘরে ফিরছেন চাষিরা। মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারে চলছে নতুন পাট কেনাবেচা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে পাট চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে পাটের চাষ কমেছে ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির। এবার পাট চাষে অনুকূল আবহাওয়া ছিল।

পাট কেনাবেচায় সংশ্লিষ্টরা জানান, পাটের হাট সাধারণত ভোর বেলায় বসে। হাটবারে বিভিন্ন উপজেলার ধান কেনাবেচা হয়। ভোর থেকে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যেই পাট কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই স্থানে হাটের অন্য জিনিসপত্র কেনাবেচা হয়। বাঘা উপজেলায় বসে দিঘাহাট। এই হাটে পাট কেনাবেচা হয়েছে প্রকার ভেদে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাটের দাম গড়ে ২০০ টাকা বেশি। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধারণা এবার শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ পাটের দাম পাবেন তারা।

চারঘাট উপজেলার সারদা বাজারে পাট বিক্রি করে ইমরান আলী বলেন, পাটের বীজ বপণের সময়ে বৃষ্টিপাত ছিল না। ফলে অনেকের পাটের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া অনেকেই পানির অভাবে পাটের বীজ বপণ করেননি। তবে দুই সপ্তাহ আগেও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে এক দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে খালবিলে পানি জমায় সেই চিন্তা কেটে গেছে। এ বছর এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন ধরা হচ্ছে ৭ থেকে ৮ মণ করে।

বাঘার আড়ানী গ্রামের পাট চাষি মজিবর বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাট কাটা শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এই এলাকার চাষিরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করেন না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রঙ ভালো হয় না।

ওই গ্রামের আবদুল মজিদ জানান, গত শুক্রবার ভ্যানে করে ৬ মণ পাট ১২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। তবে তারমধ্যে ভ্যান খরচ ও খাজনা দিতে হয়েছে। হাটে বাজারে পাটের চাহিদা ভালো আছে। বিক্রি করতে কোনো সমস্যা নেই।

পাট ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, তবে পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলায় প্রতি মণ পাটের দাম রাজশাহীর চেয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি। কিন্তু এই এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক কম পাচ্ছেন চাষিরা।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ব পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বাজারে ওঠা পাট হয়ত পরিপক্ব হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ভালো হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর