মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১৮:১৪

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা নয়া পাড়া ক্যাম্পের আলোচিত আবুল ফয়েজ হত্যা মামলায় এক রোহিঙ্গাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, আট মাস আগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবুল ফয়েজ নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হয়। ওই ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আনসার উল্লাহ সহ কয়েকজনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন ছেলে মো. ইসমাইল। মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় এসআই আজহারুল ইসলামকে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়ার নামে বাদীর কাছ থেকে নগদ ও বিকাশে কয়েক দফায় ৭৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরেও আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উল্টো মামলার বাদীকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এসআই আজহারুল ইসলাম।

মো. ইসমাইলের দাবি, মামলা দায়েরের পর থেকে তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল রিপোর্ট ও অন্যান্য খরচের নামে বিভিন্ন সময় নগদ ও বিকাশে ৭৫ হাজার টাকা নেন। মামলা চালানোর খরচ ও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করে তদন্ত কর্মকর্তা। এতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তার ফোন থেকে ওসির সঙ্গেও কথা বলিয়ে দেন তিনি। ওসি তার কথা মত কাজ করতে বলে ফোন কেটে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সর্বশেষ কয়েক দফায় মামলার আসামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাদের কাছ থেকে ক্যাশ ২০ লাখ টাকা নেন। আসামিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা ৫ লাখ টাকা দাবি করেন বলেও জানান মামলার বাদী। টাকা না দিলে বাদীকে উক্ত মামলায় আসামি করা হবে হুমকি দিয়ে আসছিল বলে দাবী করেন তিনি।

মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফ হ্নীলা নয়া পাড়া সি ব্লক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শীর্ষ সন্ত্রাসী, মানবপাচারকারী ও একাধিক মামলার আসামি আনসার উল্লাহ, একই ক্যাম্পের পি ব্লকের মো. কাশিমের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ, সি ব্লকের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে আব্দুর রশিদ, সুলতান আহমেদের ছেলে মো. হোসাইন, মো. আমিনের ছেলে ওমর ফারুকসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন।

মামলা এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পূর্ব শত্রুতার জেরে মামলার বাদী ও তার বাবা আবুল ফয়েজকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখ রাত ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে দরজার ফাঁক দিয়ে ২ রাউন্ড গুলি চালালে মো. ইসমাইলের বারো বছরের মেয়ে উম্মে সালমার পায়ে গুলি লাগে। এরপর হৈচৈ শুরু হলে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুড়ে। এসময় আশেপাশের লোকজন ছোটাছুটি করে দৌঁড়াতে থাকলে তারা পালিয়ে যায়।

মামলার বাদী মো. ইসমাইল (৩৭) টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের ৮১৮ নং শেডের বাসিন্দা।

এদিকে মামলার বাদীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে জেনে নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ নয়া পাড়া ক্যাম্প থেকে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তার পরিবার।

এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলামের সঙ্গে একাাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওসমান গণি বলেন, এরকম সেনসিটিভ হত্যা মামলা নিয়ে বাণিজ্য করার প্রশ্নই উঠে না। আমরা সব ধরনের তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। শীঘ্রই আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়া হবে। মামলার তদন্তের জন্য টাকা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তদন্ত কর্মকর্তা কোনো টাকা নিয়েছে বা চেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এছাড়াও ওসি বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় স্বাক্ষীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হলেও আমরা কোনো স্বাক্ষীকে পাচ্ছি না। মামলার বাদীকেও একাধিকবার যোগাযোগ করতে বললেও তিনি আসছেন না।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ