গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা দেয়ালগুলোতে রং তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তুলছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন দেয়ালে রং তুলি দিয়ে গ্রাফিতি ও স্লোগান লিখে রাঙিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত তারা। শিক্ষার্থীদের আঁকা এ গ্রাফিতে ছাত্র গণ অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী, ব্যক্তি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, সমাজের রাষ্ট্রের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাক স্বাধীনতা, সমঅধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের অগ্নিময় উক্তি, গান ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাসহ বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশের দেয়াল গুলোতো নানা রঙয়ে রাঙিয়ে তুলছে দেয়াল। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা মিলছে রং তুলি। আপন মনে আঁকছে তাদের অপেশাদার মেধা দিয়ে মেধাবীদের গ্রাফিতি। নানা শিক্ষামূলক বাক্যসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অপরূপ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলছে শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের আঁকানো দৃশ্যের মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের নানা দৃশ্যই বেশি ফুঁটিয়ে তুলছে। দেয়ালকর্ম এবং গ্রাফিতিতে স্মরণ করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের।
উপজেলার পল্লিবিদুৎ,সফিপুর এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিসহ লেখা, 'আমরাই বাংলাদেশ, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি, মেধার বিজয়, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ - যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেষ, অরুণ প্রাতের তরুণ দল, স্বাধীনতা এনেছি সংস্কার আনবো, বল বীর চির উন্নত মম শির, শোনো মহাজন আমরা অনেকজন, ছিন্ন করা শিকল —এমন নানা কিছু। দেয়ালের লেখা আর ছবি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সবার।
সফিপুর ফ্লাইওভারের পিলারে অপু'র নেতৃত্বে গ্রাফিতি আঁকছিলেন ইতি, সাদিদ, নুসরাত, আশরাফুল, তরুণ, রাসেদ সহ অনেকে। তারা বললেন, ‘আমাদের দাবিগুলো যেন হারিয়ে না যায়, এ জন্যই দেয়ালে লিখে রাখা হচ্ছে। জুলাই রক্তাক্ত ও আগস্টে বন্যা নিয়ে গ্রাফিতি করছি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপজেলার সৌন্দর্য নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন স্থানে অযাচিতভাবে পোস্টার লাগানো। এ পোস্টারগুলো সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক বা ব্যবসায়িক প্রচারের উদ্দেশ্যে লাগানো হয়। এগুলো শহরের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের দেয়াল, সড়কের পাশের ফুটপাত, ল্যাম্পপোস্ট ইত্যাদি জায়গায় লাগানো হয়। যা নান্দনিকতা ও পরিপাটি ভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেয়ালে বিভিন্ন সিনেমা হলের নোংরা পোস্টার লাগানো হয়। যা আমাদের সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেশটা আর নষ্ট হতে দেব না। এই দেশ আমাদের। নতুন করে স্বাধীন হয়েছে দেশ। আমরা সবাই মিলে দেশটা সুন্দর করে গড়ে তুলবো।
রকিব নামে এক ছাত্র বলেন, আমরা জুলাই মাস রক্তাক্ত ও আগস্টে বন্যার যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সেটা গ্রাফিতের মাধ্যমে তুলে ধরছি।
শিক্ষার্থী ইতি রানী দাস বলেন, শিক্ষার্থীদের এ বিজয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার। আমরা আমাদের দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই। কোটা আন্দোলনে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী শহিদ হয়েছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে আমরা দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে গ্রাফিতির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুরাইয়া বলেন, বিজয়ের আনন্দ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমরা দেয়াল লিখনের কাজ হাতে নিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্লোগান এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে, যেন তারা নিজেরা সচেতন হয়।
রুমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা আন্দোলনে আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়েরা প্রাণ হারিয়েছে। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে এ দেশ থেকে বিদায় করেছি। এখন আমাদের ছাত্র আন্দোলনের বড় ভাইয়েরা বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাতে আমরা খুবই খুশি।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ