মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সাবেক ডিএমপি কমিশনার ফারুকের বিরুদ্ধে

প্রকাশনার সময়: ২১ আগস্ট ২০২৪, ২৩:২১

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (অব.) ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এনে আইনগত ব্যবস্থা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করা হয়।

খন্দকার গোলাম ফারুক টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ঘাটান্দী এলাকার মৃত খন্দকার হায়দার আলীর ছেলে।

অভিযোগে জানা যায়, গোলাম ফারুক চাকরি অবস্থায় ক্ষমতার বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সারা দেশ থেকে এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গোলাম ফারুক দ্বৈত নাগরিক। তিনি প্রথমে বাংলাদেশি নাগরিক, দ্বিতীয় আমেরিকার নাগরিক (গ্রীন কার্ড) পাওয়া। ফারুকের স্ত্রীর ভাই-বোনেরা আমেরিকার নাগরিক। তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ফারুক নিজে এবং তার নিকট আত্মীয়দের দিয়ে তার আড়াই হাজার কোটি অবৈধ টাকা আমেরিকায় বসবাসরত স্ত্রী ভাই-বোনদের কাছে পাচার করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ টাকা রয়েছে। কৌশলগত কারণ এই সম্পদ ও নগদ টাকা নিকট আত্মীয়, স্বজনদের নামে এবং বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে রেখেছে।

দুনীতির টাকার অংশ বিশেষ দিয়ে খন্দকার হায়দার আলীর বাড়িতে তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক বাড়ি, ঘাটান্দী খন্দকার হায়দার আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়টি কয়েক বিঘার জমির এরিয়া নিয়ে রয়েছে। হায়দার আলী স্মৃতি কল্যাণ সংস্থাও রয়েছে। ইসমাইল খন্দকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার খিলক্ষেতে একটি ফ্ল্যাটের মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি ক্রয়সহ বাসা-বাড়ি তৈরি করেছে। খন্দকার মিশুর নামে রয়েছে ভূঞাপুরে তিনতলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক মডেল বাড়ি যার মূল্য জমিসহ ৪ কোটি টাকা। খন্দকার আশরাফকেও ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি বাস গাড়ি কিনে এবং খন্দকার বাড়ি নামে ১ কোটি টাক খরচ করে একটি বাড়ি তৈরি করে দেয়। ভূঞাপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র খন্দকার জাহিদকে ৫তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি তৈরি, ৪টি ট্রাক গাড়ি, প্রাইভেটকার ১টি, ইটের ভাটা ১টি, এগুলো ছাড়াও ভূঞাপুরে প্রায় ৫ কোটি টাকার জমি ক্রয় এবং ঢাকায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। প্যানেল মেয়র ফারুকের একমাত্র হাতিয়ার। তার নামে এবং স্ত্রীর নামে প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং কিছু নগদ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে রেখেছে।

গোলাম ফারুক তারা চার ভাই। এরা হলেন- খন্দকার হাবিবুর রহমান সেলিম, খন্দকার সুরুজ, খন্দকার ফিরোজ ওরফে কালু। খন্দকার হাবিবুর রহমান সেলিমের নামে এবং তার স্ত্রীর নামে প্রায় ৩০ কোটি টাকা জমি ক্রয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে নগদ ৫০ লাখ টাকা জমা রেখেছে। ভূঞাপুর বাসষ্ট্যান্ডে খন্দকার সুরুজকে প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে মোটর গাড়ির পার্টসের দোকান দিয়েছে। সুরুজ এবং তার স্ত্রীর নামে ২৫ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছে। এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ১ কোটি টাকা রয়েছে। খন্দকার ফিরোজ কালুর নামে ২ কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছে। তার একাধিক একাউন্টে প্রায় ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। ফারুকের ছোট বোনের স্বামী বজলুর রশিদ খান চুন্নু মধুপুর শাহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ। তার নামে ময়মনসিংহ শহরে একটি বাড়ি, মধুপুরে একটি বাড়ি, টাঙ্গাইল শহরে একটি বাড়ি ক্রয় করেছে। তার বিভিন্ন একাউন্টে ২ কোটি টাকা রেখেছে।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটনে এসি হিসেবে যোগদান করে বিভিন্ন আভিযানের মাধ্যমে অপরাধ দমনের নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগায়ে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১শ’ ৫০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়। রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দায়িত্ব সময়কালে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

ডিএমপি কমিশনার দায়িত্বে থাকাকালিন চাকরির শেষ সময়ে ব্যাপক অবৈধ ক্ষমতা খাটিয়ে ১৪৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকাগুলো দুই হাজার পাচশ’ কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছে। বাকি ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে গোলাম ফারুকের স্ত্রী শারমীন আক্তার খানে নামে জমি, বাসা ক্রয় এবং তার একাধিক একাউন্টে নগদ টাকা রয়েছে।

ময়মনসিংহে তার স্ত্রী এবং নিজের নামে প্রচুর জমি ক্রয় করেছে। যা ময়মনসিংহের সাব রেজিস্ট্রার অফিস তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। তার নিকট আত্মীয়দের নামেও প্রচুর জমি ও বাসা ক্রয় করার অভিযোগ রয়েছে। চট্রগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি দায়িত্ব পালন সময়ে চট্রগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও থানায় তার নিজের নামে এবং স্ত্রীর নামে জমি এবং বাসা করার অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে, এ বিষয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করেন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ