বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠীতে ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার ১৩ দিন ধরে কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। যে কারণে ইউনিয়নের বাসিন্দারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই নাগরিকদের সেবা দিতে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের দাবি জানিয়েছেন ইউপি সদস্যরা।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৪ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের কাছে ১১ জন সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেন।
লিখিত আবেদনে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রতীকে নির্বাচিত কলসকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার ওইদিন থেকে অদ্যাবধি ১৩ দিন ধরে পরিষদে অনুপস্থিত রয়েছেন। যে কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করার নিয়ম থাকলেও একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে তিনি কাউকেই প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান মুন্না তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি– কোনো অভিযোগই বাদ পড়েনি। এসব জানিয়ে ১২ জন ইউপি সদস্যের মধ্যে ১১ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই জন সংরক্ষিত (নারী) ওয়ার্ডের সদস্য।
কলসকাঠী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান বাদল জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চেয়ারম্যান পরিষদে আসেননি। এতে ১৩ দিন ধরে থমকে গেছে সব কাজ। বিপাকে পড়েছেন জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, এনআইডি সংশোধনসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে আসা হাজারো মানুষ।
ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য জাকির খান জানান, পরিষদের জন্য আসা গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বা টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), এলজিইডির দেওয়া ১ শতাংশ টাকার কাজে চেয়ারম্যান মুন্না তালুকদার অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা বিতরণেও অনিয়ম করেছেন। তার ভাষ্য, আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় সদস্যদের নানাভাবে হুমকিও দেন তিনি।
লিখিত আবেদনে সই দিয়েছেন ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সৈয়দ আরিফুল করিম, ২নং ওয়ার্ডের মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জাকির হোসেন খান, ৪ নম্বর মো. মতিউর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নিজাম উদ্দিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ওয়াহেদ খান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জাফর হাওলাদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান বাদল, ৯নং ওয়ার্ডের সীমা বেগম এবং ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত (নারী) সদস্য অঞ্জলী রানী মুখার্জি, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিনা বেগম।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য অঞ্জলি রানী মুখার্জির ভাষ্য, চেয়ারম্যান মুন্না তালুকদার শপথ নেয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তবে উন্নয়ন বরাদ্দসহ সরকারি অনুদান আসলে লোভ সামলাতে না পেরে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেন। দুর্ব্যবহার শুরু করেন সদস্যদের সঙ্গে।
ইউপি সদস্য ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের কারণে একটি চক্র ইউপি সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত করেছে। তিনি অচিরেই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন বলেও জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কলসকাঠী ইউনিয়নের ১১ জন সদস্য স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদন প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিষদের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ