ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিনাজপুরে কমেছে ধানের সরবরাহ, বেড়েছে দাম

প্রকাশনার সময়: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৫

ফলন ভালো হলেও বোরো মৌসুম শেষ হতেনা হতেই ধানের জেলা দিনাজপুরের বাজারে কমেছে ধানের সরবরাহ। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করছে দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে বস্তা প্রতি (৭৫) বোরো ধানের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

ছোটো ছোটো ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কৃষকের ঘরে আর তেমন ধান নেই, ধান কিনে মজুদ করে রেখেছে বড় বড় ব্যসায়ীরা। তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করবে চালের বাজার।

দিনাজপুরের অন্যতম বৃহৎ ধানের বাজার সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ হাট। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার এই হাটে বেচাকেনা হয় ধান। ভরা মৌসুমে এই হাটে এক দিনেই বেচাকেনা হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার বস্তা ধান।

সোমবার (২৯ জুলাই) হাটে গিয়ে দেখা যায়, কমেছে ধানের সরবরাহ। হাট ইজারাদার মনির এক প্রতিনিধিকে জানান, শুক্রবার বাজারে ধান এসেছে ৫ থেকে ৬শ বস্তার মতো। তিনি বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে আসায় ক্রমান্বয়ে কমছে ধানের সরবরাহ। এ দিকে হাটে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম।

সোমবার (২৯ জুলাই) গোপালগঞ্জ হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইব্রিড ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৭৫) কেজি ২,১৫০ টাকা থেকে ২,২০০ টাকায়, (বি-আর ২৮) জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ২,৫০০ টাকা থেকে ২,৫৫০ টাকা এবং স¤পা কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ২,৬৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা হাইব্রিড ধান বিক্রি হয় ২০০০ টাকা থেকে ২০৫০ টাকা, বি-আর ২৮ জাতের ধান বিক্রি হয় ২,৩০০ টাকা থেকে ২,৪০০ টাকায় এবং সম্পা কাটারি জাতের ধান বিক্রি হয় ২,৫৫০ টাকায়।

অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা ধানের দাম বেড়েছে প্রকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

হাটে ধান ক্রেতা অমরেশ বসাক জানান, কৃষকের ঘরে এখন আর তেমন ধান নেই। তাই হাটে ধানের সরবরাহ কমেছে। বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামেই ধান কিনে চাল তৈরি করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ছোটো ব্যবসায়ী, পুঁজিও স্বল্প। হাটে ধান কিনে চাল তৈরি করে বিক্রি করি। চালের টাকা পেয়েই আবার ধান কিনি। বাজারে যখন যেমন দাম থাকে, তখন সামান্য লাভ রেখে আমাদের চাল বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীরা ভরা মৌসুমে তুলনা মূলক কম দামেই প্রচুর ধান কিনে মজুদ করে রেখেছে। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করবে চালের বাজার। বোরো ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে এবার ধান বিক্রি হয় প্রতি বস্তা ১,৯০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত।

হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক সহরাব হোসেন বলেন, কীটনাশক বাকিতে নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান কাটা মাড়াই মৌসুমেই ধান বিক্রি করে সেই বাকি শোধ করতে হয়েছে। অবশিষ্ট যেটুকু ধান ছিল সেটুকু এখন বিক্রি করে আমন আবাদের খরচ চালাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষকের ঘরে যখন ধান শেষ, তখন বাড়তে শুরু করেছে ধানের দাম।

চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দশ থেকে পনেরো দিন আগে থেকেই দিনাজপুরে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি তিন থেকে চার টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৫ টাকা থেকে ৬৮ টাকা, বি-আর ২৬ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, হাইব্রিড চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। প্রায় দশ থেকে পনেরো দিন আগে দিনাজপুরে কেজি প্রতি চালের দাম বৃদ্ধি পায় ৩ থেকে ৪ টাকা। এখনও সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.নুরুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টোন (চালের আকারে)। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানা তিনি।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ