ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নার্সারি ব্যবসা করে সফল উজ্জ্বল শেখ 

প্রকাশনার সময়: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৭

নার্সারি ব্যবসা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মো.উজ্জ্বল শেখ। বর্তমানে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত তিনি। একসময় অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করলেও এখন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সচ্ছলভাবে দিন যাচ্ছে তার।

মো.উজ্জ্বল শেখ লোহাগড়া উপজেলার ১২ নম্বর কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী গ্রামের মো. তারা মিয়া শেখের ছেলে।

জানা যায়, ২০০৯ সালে উজ্জ্বল শেখ বাড়ির পাশের জমিতে গাছ লাগানোর জন্য স্থানীয় লোহাগড়া হাটে যান কিছু ফলজ ও বনজ গাছ কেনার জন্য। ৫০টি চারা দরদাম করার পর বিক্রেতা তার কাছে থাকা সবগুলো চারা অল্প দামে দিয়ে যান। সেই দিন হাটে এক হাজার টাকার চারা বিক্রি করেন উজ্জ্বল এবং অবশিষ্ট চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন। এরপর কিছু দিন অন্যের কাছ থেকে চারা কিনে এনে বিক্রি করতে থাকেন। আর ফাঁকে ফাঁকে শেখেন নার্সারি করার নিয়ম-কানুন। পরে নিজ গ্রাম ঈশানগাতী শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে ৩টি নার্সারির মালিক তিনি। ১৪ বছর ধরে নিজের হাতে চারা তৈরি করে সরবরাহ করছেন লোহাগড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

নার্সারির মালিক মো. উজ্জ্বল শেখ বলেন, প্রথম দিকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে নার্সারির পেছনে। অভিজ্ঞতার কারণে এখন আর খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। নার্সারির পরিচর্যা করার জন্য ৩/৪ জন কর্মচারী রয়েছে। বীজ থেকে চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুত করে বীজ অথবা চারা রোপণ করতে হয়। এ জন্য মাটিতে পরিমিত টিএসপি, গোবর, পটাস, খৈল দিয়ে এক সপ্তাহ রাখতে হয়। সাধারণত ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছ ২০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের গাছের চারাই এখানে পাওয়া যায়। তার নার্সারিতে বীজের মাধ্যমে ও কলমের মাধ্যমে দুভাবেই চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়।

বর্তমানে মো. উজ্জ্বল শেখের সাড়ে ৩ একর জমির ওপর নার্সারি রয়েছে। তার নার্সারিতে বর্তমানে রয়েছে আম, জাম, লিচু, জামরুল, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই, কতবেল, আমলকী, লেবু, মাল্টা, বরই, কামরাঙ্গা, ডালিম ইত্যাদি ফলের চারা। এছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলি, হাসনাহেনা, বকুল, শিউলি, গাঁদা, গন্ধরাজ, মোসেন্ডা, টগর, জুঁই, কচমু, সিলপিয়া ও ডালিয়া। বনজ গাছের মধ্যে রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশমণি, চাম্মুল, নারকেল, সুপারি, লাম্মু ইত্যাদি। ওষুধি গাছ রয়েছে নিম, হরীতকী, বয়রা, অর্জুন। চারা উৎপাদন আর বিক্রি করে বছরে বেশ ভালো আয় হয়ে থাকে। মো. উজ্জ্বল শেখের সংসারে এখন কোনো অভাব নেই। একসময়ের অভাব-অনটনের সংসারে ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছতা।

মো. উজ্জ্বল শেখ আরও বলেন, লোহাগড়া বাজারে আমার একটি দোকান ঘর আছে। সেখানে গাছ রেখেও বিক্রি করা হয়। এ দোকানে দুইজন কর্মচারী কাজ করে। নার্সারির এই চারাগুলোর এক একটির দাম ২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ চারাই ২৫ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

নার্সারি ব্যবসায় আয়-ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নার্সারি ব্যবসায় কোনো দিন পাঁচ হাজার আবার কোনো দিন তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। বিদ্যুৎ পানি বিল এবং অন্যান্য খরচ বাদে মাসে গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে মৌসুমের সময় একটু বেশি আয় হয়।

এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, মো. উজ্জ্বল শেখের নার্সারিতে উৎপাদিত চারার বেশ সুনাম রয়েছে। এ ধরনের উদ্যোক্তারা যাতে করে ব্যবসায়ী হিসেবে টিকে থাকতে পারেন এবং দেশের বনায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ