শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

ফুলবাড়ীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, যেন মশার প্রজনন খনি

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১৫:০৩

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপগুলো এখন মশার প্রজনন খনিতে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা দিনের পর দিন স্তূপ আকারে থেকে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে মশা আর দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন পথচারীসহ এলাকাবাসী। পৌর কর্মচারিরা এলাকার ময়লা-আবর্জনা এসব স্থানে ফেলায় এ দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাড়ী পৌরশহরের উপজেলা পরিষদ সড়কের কাটিহার ধর ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌর বাজারের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা এনে ফেলে স্তূপ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ লেখা সম্বলিত একটি ছোট আকারের ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিছুদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের ব্যানারটি কে বা কারা সরিয়ে ফেলেছে। এরপর থেকে আবারও শুরু হয়েছে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা। এসব ময়লা কুকুর মুখ দিয়ে টেনে সড়কের ওপর নিয়ে আসছে। এতে দুর্গন্ধ ছাড়িয়ে পড়ায় পথচারীদের নাক চেপে চলাচল করতে হচ্ছে। একইভাবে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ফুলকুঁড়ি বিদ্যানিকেতনের সামনে থেকে কাটিহার ধার ব্রিজ পর্যন্ত ড্রেনটি দীর্ঘদিন থেকে পরিষ্কার না করায় সেটিও মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। এই সামান্যতম ড্রেনের পার্শ্বেই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করছেন দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মশার দাপটে তারাও অতিষ্ঠ।

এ দিকে একই কায়দায় পৌর কর্মচারিরা ফুলবাড়ীর উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পুরাতন লোহার ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে এবং পৌর বাজারের ফুট ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নদী ভরাট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এগুলোও এখন মশা উৎপাদনের নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেও মশা নিধন না হওয়ায় বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। মশা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষের তেমন কার্যকর ভূমিকাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে মশার দাপটে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়ী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় রয়েছে ২৯টি মহল্লা, ৫টি বস্তি ও ২টি হাট-বাজার। পৌরশহরে

লোকসংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার।

কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন বলেন, মশার অত্যাচারে কোথাও এক মিনিট নিরাপদে অবস্থান করা যাচ্ছে না। ইলেকট্রিক ব্যাট, অ্যারোসল, কয়েল জ্বালিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।

চিকিৎসক শিশির সরকার বলেন, ঘরোয়াভাবে মশা নিধন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা বিরাজ থাকলে এডিসসহ অন্যান্য মশা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এডিস মশা প্রতিকূল পরিবেশে ডিম ছাড়তে পারে। ডিমগুলো অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। পানির স্পর্শ পেলেই এগুলো থেকে লার্ভা হয়।

উপজেলা পরিষদ রোডের কাটিহারধর কালভার্ট সংলগ্ন বাসিন্দা অনুপ গুপ্ত ও পায়েল সরকার বলেন, কাটিহারধর কালভার্টের পিলারের ওপর পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা- আবর্জনা ফেলায় সেখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। পঁচা ময়লা- আবর্জনার দুর্গন্ধসহ মশার দাপটে বাসাবাড়িতে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। দুপুরের পর থেকে ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়েও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না।

স্কুল শিক্ষক সঞ্জিব কুমার চক্রবর্তী বলেন, মশার কারণে সারাদিন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। নাকে মুখে মশা কয়েলের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ছেলে- মেয়েসহ বাড়ির সবাই অসুস্থ হয়ে পড়বে।

পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, পৌরসভার মশা নিধন কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ