ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কারফিউয়ের প্রভাবে নষ্ট হলো ১৫ লাখ টাকার আম

প্রকাশনার সময়: ২৫ জুলাই ২০২৪, ২২:১১

স্বাদে ও মানে অনন্য হওয়ায় সারা দেশেই বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে নওগাঁর আম। বর্তমান সময়ে বাজার থেকে আম কেনার পাশাপাশি ক্রেতারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনলাইনেও। ক্রেতাদের দোরগোড়ায় আম পৌঁছে দিতে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে কুরিয়ার সার্ভিস। গেল সপ্তাহে সরকারের দেওয়া কারফিউয়ের প্রভাব পড়েছে কুরিয়ার এবং পার্সেল সার্ভিস পরিবহনের ওপর। কারফিউয়ের ফলে প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার আম পঁচে নষ্ট হয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) আমের ব্যাণিজিক রাজধানী নওগাঁর সাপাহারে অবস্থিত কুরিয়ার এবং পার্সেল সার্ভিসগুলোর ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ এবং ১৮ জুলাইয়ের বুকিংকৃত অধিকাংশ আম রাস্তায় নষ্ট হয়েছে।

স্টেড ফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেডের সাপাহার হাবের ম্যানেজার হাসান চৌধুরী নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘১৭ জুলাই প্রায় ৮০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম বুকিং হয়েছিলো আমাদের হাবে। দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিলো তিনটি গাড়ি। কিন্তু কারফিউয়ের কারণে গাড়িগুলো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। এতে ৮০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম সবগুলোই রাস্তায় পঁচে নষ্ট হয়েছে। যেগুলোর আনুমানিক ওজন ছিলো প্রায় ১০ হাজার কেজির বেশি। সর্বনিম্ন দাম ধরলেও প্রায় ৯ লাখ টাকার আম নষ্ট হয়েছে।

গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনোই কাউকে বলি নাই যে কাঁচাপণ্য নষ্ট হলে এর দ্বায়ভার কম্পানি নিবে। আমাদের কাছে যখন গ্রাহক আইডি খোলা হয় তখন শর্তের মধ্যে উল্লেখ থাকে যে কাঁচাপণ্যের দ্বায়ভার কম্পানি নিবে না। সরকার অথবা কোম্পানি থেকে কোনো সহযোগিতা করা হলে আমরা সেটা গ্রাহককে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এই ঘটনার পর থেকে আমরা আর কোন আম বুকিং নিচ্ছি না।

এ.জে. আর পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিসের সাপাহার শাখার এজেন্ট মুমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বশেষ বুকিং নিয়েছিলাম বুধবার (১৭ জুলাই), এদিন প্রায় ৪০০-৫০০ প্যাকেট (ক্যরেট) আম বুকিং হয়েছিলো আমাদের শাখায়। আশপাশের জেলার ১০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম নষ্ট হয়েছে। যার আনুমানিক ওজন প্রায় ৪ হাজার কেজি এবং সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৪ লাখ টাকা। রাষ্ট্রের ব্যাপারে নষ্ট হলে এর দায়ভার আমরা নিতে পারি না। আমাদের কোনো গাফিলতির কারণে নষ্ট হলে তার দায়ভার আমরা নিতাম।’

একই অবস্থা করোতোয়া কুরিয়ার এন্ড পার্সেল সার্ভিসেও, এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ইনচার্জ আশরাফুল আলম বকুল বলেন, ‘সর্বশেষ বুকিং নিয়েছিলাম ১৩০ প্যাকেট আম। কিন্তু কারফিউয়ের কারণে সব আম পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। উপজেলা পর্যয়ের ঠিকানাগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে। কারফিউয়ের কারণে সেগুলোতে গাড়ি যেতে পারেনি। কিছু আম ঢাকায় সঠিক সময়ে পৌঁছার পরেও কারফিউয়ের কারণে গ্রাহকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসতে পারেনি। এতে অফিসেই অনেক আম নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি আম নষ্ট হয়েছে।

গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী, রংপুর হেড অফিস এবং আমাদের শাখার মাঝে সমন্বয় করে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

সুন্দরবন কুরিয়ার অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসের সাপাহার শাখা ইনচার্জ নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘শুক্রবার (১৯ জুলাই) ২০০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম বুকিং হয়েছিলো আমাদের শাখায়। অফিস থেকে নির্দেশনা আসায় আম গ্রাহককে ফিরিয়ে দিয়েছি। যার কারণে আমাদের কাছে কোন আম নষ্ট হয়নি। গ্রাহক পরবর্তীতে সে আম কী করেছে আমরা তা জানি না।’

আহমদ পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস এবং সওদাগর কুরিয়ার সার্ভিসে ১০ থেকে ১২ প্যাকেট (ক্যারেট) করে আম নষ্ট হয়েছে।

সকল কুরিয়ার সার্ভিসের নষ্ট আমের হিসাব করলে দেখা যায় প্রায় ১৪৫০ প্যাকেট (ক্যারেট) আম নষ্ট হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) প্রতি মণ আম্রপালি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৫ ০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি মণ বারি-৪ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। প্রতি মণ ফজলি আম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। ব্যানানা ম্যাঙ্গো বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। ১৪৫০ ক্যারেট আমের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে হিসাব করলে দাম আসে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

কুরিয়ারে এবং পার্সেল সার্ভিসের অধিকাংশ আম পাঠিয়ে থাকেন তরুণ উদ্যোক্তারা। তাদের কাছে সারা দেশ থেকেই অনলাইনে আমের অর্ডার আসে। কারফিউয়ের ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন উদ্যোক্তারা।

কারফিউয়ের প্রভাবে ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তরুণ উদ্যক্তো ওমর ফারুক জানান, ‘পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইনে আম বিক্রয় করে নিজের কিছুটা অর্থিক উন্নতি হচ্ছিলো। কিন্তু কারফিউয়ের কারণে অনেকটাই লোকসানে পড়তে হবে। বুধবার এ.জে.আর কুরিয়ারে ৪০০ কেজি আম (২০ ক্যারেট) আম বুকিং করেছিলাম। কিন্তু আমগুলো সব রাস্তাতেই নষ্ট হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গ্রাহককে আবার আম পাঠানো লাগবে।

কারফিউয়ের প্রভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্টেড ফাস্ট কুরিয়ারে ৭০০ কেজি আম (৩৫ ক্যারেট) দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য বুকিং করেছিলাম। কারফিউয়ের কারণে সব আম নষ্ট হয়েছে। যার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে ১ মণ আমে ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়। কিন্তু নতুন করে গ্রাহককে আম পাঠানোই লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

কারফিউয়ের পর একই অবস্থা বিরাজ করছে সাপাহারের প্রায় সব কুরিয়ারে। আগের তুলনায় কমেছে গ্রাহকের সংখ্যা। এতে সঙ্কিত অবস্থায় আছেন উদ্যোক্তা এবং কুরিয়ার ব্যবসায়ীরা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ