গড়াই নদী শাসনের (ড্রেজিং) নামে প্রবাহমান সরকারি খালের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে হুমকিতে পড়েছে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, এনায়েতপুর ও এতমামপুর গ্রামের অন্তত দুই হাজার বিঘা ফসলি জমি।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, বার বার বলার পরেও পাউবো অপরিকল্পিতভাবে নদী শাসন করেছে। বন্ধ করে দিয়েছে খালের মুখ। এতে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলসহ জমি প্লাবিত হয়েছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। তারা দ্রুত বালু অপসারণের দাবি জানান।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোবিন্দপুর গ্রামের কোলের মাঠ থেকে গড়াই নদী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ড্রেনেজ খাল রয়েছে। তা দিয়ে গোবিন্দপুর, এনায়েতপুর ও এতমামপুর গ্রামের প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পানি যাওয়া-আসা করে। তবে প্রায় দুই মাস আগে গড়াই নদী শাসনের নামে ড্রেজিংকৃত বালু ফেলে ওই খালের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আর কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে অন্তত ৫০টি পুকুর।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের পানিতে স্রোত নেই। সদ্য রোপণ করা ধানের চারা ডুবে গেছে। পাটক্ষেতে হাঁটু পানি। আর খালের মাথায় প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া বালুর স্তুপ রয়েছে।
এসময় গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক টুটুলের সঙ্গে কথা হলে জানান, মাঠে পুকুরসহ তার প্রায় ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৭ বিঘা জমিতে তিনদিন আগে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। তবে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে চারা পানিতে ডুবে গেছে।
তার ভাষ্য, দুমাস আগে পাউবো বালু ফেলে খালের মুখ ভরাট করেছে। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ধান ও পাটক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। অন্তত দুই হাজার বিঘা জমি হুমকিতে পড়েছে।
কৃষক লিয়াকত আলী জানান, ১৫ দিন পরেই পাট কাটা শুরু হবে। তবে পাটের জমিতে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। এতে পাটের মাথা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। দ্রুত পানি অপসারণের দাবি জানান এ কৃষক।
সফিকুল নামে আরেক কৃষক জানান, বালুর কারণে প্রায় দুই হাজার বিঘা তিন ফসলি জমি হুমকিতে পড়েছে। তিনি খালের মুখ থেকে বালুর স্তুপ সরানোর দাবি জানান।
প্রায় দুই মাস ধরে খালের মুখ বন্ধের বিষয়টি জানেন না বলে জানান কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ড্রেজার) মো. জিনারুল।
তিনি জানান, নদী শাসনের সময় খালের মুখ ভরাট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বালু সরানোর জন্য তার লোকদের নিজস্ব ভ্যেকু দিয়েছিলেন।
উপ-সহকারী প্রকৌশলীর এই বক্তব্য অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, তাকে খালের মুখ বন্ধ ও জলাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে সবাই। পাউবোর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বালু অপসারণ করে পানি প্রবাহ সচল করার আশ্বাস দেন কুষ্টিয়া ৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ।
নয়া শতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ