ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজশাহীতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে, পুলিশসহ আহত ২০

প্রকাশনার সময়: ১৮ জুলাই ২০২৪, ১৭:৫৬

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ডাকা ‌‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) পৃথক পৃথক স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন, রাজশাহী নগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহাদৎ হোসেন ও রাজশাহী জেলা পুলিশ লাইনে কর্মরত মো.আলাউদ্দিন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়া আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মহিলা কলেজের সামনে আসলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশের অন্য সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এছাড়া, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিট চলা এই সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সেখানে গিয়ে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে পুরো সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের পর আহত অবস্থায় অন্তত পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্স সূত্রে জানা যায়, আহত পাঁচজনের মধ্যে একজন নগরীর শাহমখদুম কলেজের ছাত্র। তার ঘাড়ে চাপাতির কোপ লেগেছে। শহরের সাহেববাজার এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত হন তিনি। এই এলাকায় বাজারের একজন ডাল ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। শহরের ভুবনমোহন পার্ক এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হয়েছেন। রাণীবাজারে আহত হয়েছেন এক যুবলীগকর্মী। এ ছাড়া মিয়াপাড়া এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে এক পথচারী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন চলাচলও। পথচারী ও সাধারণ মানুষজন প্রাণ ভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর মহানগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকা দখলে নেয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আন্দোলনের নামে যদি আর কেউ অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে এর জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। তিনি আন্দোলনের নামে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। নাহলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. সংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত দুই পুলিশ সদস্য ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে শাহাদাতের মাথায় আঘাত আছে। এছাড়াও আলাউদ্দিনের হাতে আঘাত আছে। এছাড়াও আহত ৯ শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে নাটোরের এক ছাত্র আছেন। তার গায়ে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।

এদিকে, কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। সংখ্যায় কম হলেও সকাল থেকেই শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অফিস-আদালতেও স্বাভাবিক কাজ-কর্ম চলেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি স্থানে পিকেটিং হলেও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন রুটের ট্রেন নিজ নিজ গন্তব্যে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজশাহী মহিলা কলেজ রোডে একটি মিছিল বের করেন। পরে সেখানে পুলিশ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কমপ্লিট শাটডাউনের কোনো প্রভাব রাজশাহীতে পড়েনি। এরপরও পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক, সরকারি অফিসসহ মহানগর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এছাড়া, উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে পুরো নগরজুড়ে র্যাব, পুলিশ, বিজিবির যৌথ টহল রয়েছে। কেউ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ