ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৌদি আরবের খেজুর চাষে মোতালেবের সাফল্য

প্রকাশনার সময়: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৬

বাংলাদেশের মাটি যে সোনাফলা সেটা ভালোই উপলব্ধি করেছিলেন আব্দুল মোতালেব। তাই সাহস করেছিলেন মরুর দেশের খেজুরের বীজ এনে দেশে ফলানোর। ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের এই মানুষটি শুধু সুস্বাদু ও মিষ্টি খেজুরই ফলাননি, মাত্র ৭টি গাছ থেকে হাজার হাজার চারা তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিদেশের মোহ ছেড়ে দেশে এসে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।

অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন আব্দুল মোতালেব। ১০ হাজার টাকা বেতনে খেজুর বাগানে চাকরি নিয়েছিলেন। চাষাবাদ রপ্ত করে ৩ বছরের মাথায় দেশে ফেরেন। সঙ্গে আনেন খেজুরের বীজ। বাগান করে কয়েক বছরের মধ্যে বদলে ফেলেন ভাগ্য। এখন বছরে কোটি টাকার চারা ও খেজুর বিক্রি করেন তিনি।

আব্দুল মোতালেব (৫৪) ময়মনসিংহের ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি সফল উদ্যোক্তা। সবাই তাকে ‘খেজুর মোতালেব’ বলে ডাকেন।

জানতে চাইলে মোতালেব বলেন, দেশে ফিরে আমার বাড়ির পাশে একটি জমিতে খেজুরের চারা রোপণ করি। কিন্তু প্রায় সব গাছই পুরুষ হয়ে যাওয়ায় খেজুর হয়নি। আবার গাছ লাগালে আবারও একই অবস্থা। তৃতীয় দফায় আমি সফল হই। এবার ২টি গাছে খেজুর হয়। সেই ২ গাছ থেকে আজ প্রায় ১২শ চারা উৎপাদন করেছি। বর্তমানে প্রায় ১০০টি গাছে খেজুর ধরেছে। চলতি বছর ৫ লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করেছি।

কোনো কিছুতে সহজে হাল না ছাড়া মোতালেব বলেন, লোকে বিদেশে গেলে স্যুটকেস ভর্তি জিনিস নিয়ে আসে। আর আমি আনছিলাম খেজুর। দেশের মানুষ হাসাহাসি করতো, পাগল বলতো। আমার দেয়া বীজ থেকে ২৭৫টি চারা বের হয়। চারাগুলো সাইজ করে লাগাইনি। ৩ বছর তো বেশি সময় না, মুকুল এলে চারা লাগাবো।

মোতালেব বলেন, শুরু করি ২০০১ সালে। ১৭ মাস পর একদিন আমার বউ এসে বললো- তোমার গাছে মুকুল আইছে। আমি তো বিশ্বাসই করিনি। পরে বাজি ধরে গিয়ে দেখি সত্যি মুকুল বের হয়েছে, কিন্তু পুরুষ। তখন একটা সাহস এলো পুরুষ মুকুল যখন আসছে তখন মেয়েও হবে। সেটা চৈত্র মাসের ১৭ তারিখ ছিল। বৈশাখে একটা এলো সেটাও পুরুষ। পরের বছর ৫টা, তারপরের বছর ৭টা, তার পরেরবার ৯টা গাছে মুকুল এলো, সবগুলো পুরুষ। তবুও হতাশ হইনি। তবে টেনশন বাড়ছিল। হাল ছাড়ছিলাম না।

পরের বছর ১১টা গাছের মধ্যে একটা গাছে মেয়ে মুকুল এলো। তুলে আলাদা করে লাগালাম। এই গাছটাই শাইখ সিরাজের নামে রাখলাম। আজোয়া গাছ। এটাই বাংলাদেশে প্রথম সৌদি খেজুর গাছ। প্রতি বছর উনি আসেন একবার। ওনার কাছে অনেক ঋণ আছে বলেই এটা ওনার নামে রেখেছি।

সফল এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, এখন আমি কাটিং জানি। নারী গাছগুলো থেকে গজানো চারা নারীই হয়। সেগুলো পুরুষ গাছে কাটিং করে বসানো যায়। এটা সারা বাংলাদেশে আমার মতো কেউ পারে না। আমার সব গাছ কাটিং করে মেয়ে বানাইছি।

সরকারি সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে মোতালেব বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে গাছ বিক্রি না করে হাজার হাজার চারা বানাতাম। আরও কম দামে চারা বিক্রি করতাম। আগে দেড় লাখ টাকা বেচতাম। কয়েকশ লোক আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে বাগান করছে। আমাদের দেশে খেজুর শুকানো কঠিন। মেঘ-বৃষ্টি বেশি। তাই কাঁচাই বিক্রি করি। খেজুর পেড়ে পাকা অবস্থায় ৬-৭ দিন লাগে শুকাতে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ