কক্সবাজার শহরের পানি নিষ্কাশনের যে কয়েকটি নালা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান বাহারছড়া নালাটি শহরের শহীদ সরণির পশ্চিমে। নালাটির শুরুর অংশ রয়েছে পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড জুড়ে। এর একদিকে পর্যটন জোন কলাতলীর পাশাপাশি মোহাজেরপাড়া, হাসপাতাল সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া ও ঘোনারপাড়া। এটি শহরের সার্কিট হাউস, বাহারছড়া এলাকা থেকে মিশে গেছে খাদ্যগুদাম সংলগ্ন এলাকা হয়ে বাঁকখালী নদীতে।
এর ওপরই বাহারছড়ার অংশে তৈরি হয়েছে কক্সবাজার সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন। কাছাকাছি এলাকায় নালার অংশ দখল করে রয়েছে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি বসতঘরের অংশ। খাদ্যগুদাম সংলগ্ন এলাকা হয়ে বাঁকখালী নদী মিশে যাওয়ার অংশটির অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই নালার ওপর দিয়ে খাদ্যগুদামের ফটকে তৈরি হয়েছে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কালভার্ট। কালভার্টটির নিচে দক্ষিণে দেখা গেছে নালাটি আনুমানিক ২০ ফুট। কিন্তু কালভার্টের উত্তরে এসে তা হয়ে গেছে ১০ ফুট।
গতকাল রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজারের নালার সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদে মাঠে নামে কক্সবাজার পৌর পরিষদ। পৌর মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান চলে।
গত বুধবার রাত থেকে কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক-উপসড়ক তলিয়ে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে পানি। জেলাজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার কক্সবাজারের জলাবদ্ধতা নিরসনে নালার অবস্থান নির্ধারণ, দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় কক্সবাজার পৌর পরিষদ।
গতকাল রোববার শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। প্রথমেই শহীদ সরণির পশ্চিমে বাহারছড়া নালার ওপর নির্মিত গণগ্রন্থাগার ভবনের অংশবিশেষ ভাঙার কাজ শুরু হয়। গণগ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজে বাধা দেন। তিনি পৌর মেয়রকে জানান, এটি সরকারি ভবন এবং এর কোনো অংশ ভাঙা যাবে না। পৌর মেয়র এতে গুরুত্ব না দিলে তিনি ফোনে বিষয়টি নানাজনকে অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলে আসেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মনজুর আলম। তিনি এসে কথা বলেন পৌর মেয়রের সঙ্গে। নালার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে তিন দিনের সময় চেয়ে উচ্ছেদ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মনজুর আলম জানান, জেলা প্রশাসক বিষয়টি দেখতে তাকে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন এবং জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত দেবেন।
উচ্ছেদ অভিযানে বাহারছড়া অংশে থাকা ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি বসতঘরের অংশবিশেষ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর দলটি যায় খাদ্যগুদাম সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর অংশে। ওখানেও কয়েকটি বসতি উচ্ছেদ করে অন্যদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই সময় পৌর মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নালাটি কাগজপত্রে ৬০ ফুটের বেশি। কিন্তু এটি দখল হয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুটে চলে এসেছে। এসব দখল উচ্ছেদ করে নালাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এতে কোনো বাধা মানা হবে না। আপাতত কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সময় চেয়েছেন। তাদের তিন দিনের সময় দেওয়া হলো। এরপর আবার অভিযান পরিচালিত হবে। পৌরসভার অর্থে কিছু হলে তাও উচ্ছেদ করা হবে।
মেয়র বলেন, কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোট ৫টি নালা। এই নালা দখলকারী হিসেবে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েক বছর আগে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। ওই তালিকা ধরেই অভিযান শুরু হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ