ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লটকন চাষে সফল ফল ব্যবসায়ী ইসলাম

প্রকাশনার সময়: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৬ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৩:২৭

দীর্ঘদিন ধরে ফল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ ইসলাম। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন নিজ এলাকায়। এ সময় কিশোরগঞ্জে লটকন চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি চারা রোপণ করেন তিনি। সেই চারাগুলোতে ফলন ভালো দেখে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করেন মোহাম্মদ ইসলাম। পরিত্যক্ত একটি জমিতে তিনি ১৫০টি লটকনের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের এক বছর পরই গাছগুলোতে লটকন আসতে শুরু করে। শুরু হয় ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ।

মোহাম্মদ ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকছা ইউনিয়নের ঢোলার হাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় ধরে আছে লটকন। শহর থেকে প্রতিনিয়ত ফল ব্যবসায়ীরা তার বাগানে আসছেন লটকন কিনতে। অন্যদিকে তিনি নিজেও বাগান থেকে ফল নিয়ে বিক্রি করেন বিভিন্ন জায়গায়।

মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমি ৪০ শতক জমিতে ১৫০টি লটকন চারা রোপণ করি আজ থেকে তিন বছর আগে। এক বছর পরেই আমার লটকন গাছগুলোতে লটকন আসতে শুরু করে। সেই বছর তেমনভাবে ফলন আসেনি। পরের বছর লটকন গাছগুলোতে খুব বেশি করে ফল দেখতে পাওয়া যায়। এ বছর প্রত্যেকটা লটকন গাছে অনেক বেশি ফল এসেছে। এই গাছের ফলগুলো আমি নিজেও বিক্রি করি বাজারে, এছাড়াও ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ী এসেও ফল কিনে নিয়ে যায়। এই বাগান থেকে প্রতিবছর কম করে হলেও দুই থেকে তিন লাখ টাকা লটকন বিক্রি করতে পারব। লটকন চাষ করে যে ঠাকুরগাঁওয়ে সফল হওয়া যাবে সেটি সত্যিই আমি অবাক হয়েছি।

এলাকার বিভিন্ন যুবক আমার লটকন বাগান দেখতে এসেছেন ইতিমধ্যে। দূর-দূরান্ত থেকে লটকন বাগান দেখার জন্য প্রতিনিয়ত মানুষ আসতেছে। এই ফলটি মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ ভালোভাবেই চাষ হয়ে থাকে। আমার জানামতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় লটকনের কোন বাগান নেই। আমি যেহেতু ফল ব্যবসায়ী আমরা লটকন সাধারণত দক্ষিণ অঞ্চল থেকে কিনে নিয়ে আসি। সেই লটকন বর্তমানে আমার বাগানে উৎপাদন হচ্ছে এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আশা করি এই গাছগুলো যদি বড় হয় তাহলে এখান থেকে আরও বেশি উৎপাদন হবে।

বাগান দেখতে আসা ওমর ফারুক বলেন, আমি শহর থেকে দেখার জন্য এসেছি। সত্যি আমি অবাক হয়েছি বাগানটি দেখে। ইসলাম ভাইয়ের বাগানে এসে দেখলাম প্রতিটি গাছেই লটকনের ঝুলে আছে থোকায় থোকায়। লটকন যে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হয় এটি আমি আগে জানতাম না। এত পরিমাণ লটকন উৎপাদন হয়েছে যা দেখে আমি মোটামুটি অবাক হয়েছি।

লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি লটকন চাষের জন্য উপযোগী। এখন অনেক কৃষক লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলটিতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ। ভিটামিন-‘সি’তে ভরপুর উপকারী এ ফলটি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখার পরামর্শও দিয়ে থাকেন অনেকে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে এখনো লটকন চাষ হয়নি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকছা ইউনিয়নের ইসলাম ৪০ শতাংশ জমিতে ১৫০টি লটকন গাছ রোপণ করেন। সেই গাছগুলোতে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের পক্ষ থেকে সব সময় তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লটকন একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল। এই ফল চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। তাই এই ফলটি অত্যন্ত লাভজনক ফল।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ