মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনে প্রতারিত কুষ্টিয়ার কৃষকরা

প্রকাশনার সময়: ১২ জুলাই ২০২৪, ১৪:২০

কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার অংসখ্য কৃষক বায়ার কোম্পানির 'ধানী গোল্ড' হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভালো ফলনের আশায় চড়া দামে ধানী গোল্ড বীজ কিনেছেন কৃষকরা। তবে প্রায় ৪০ শতাংশ বীজ থেকে চারা গছাচ্ছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ধানের চারাও রোগাটে হওয়ার ফলে ধানের ফলন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

তবে কোম্পানির কুষ্টিয়ার এরিয়া ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনের শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, ধানী গোল্ড বীজের মান খুবই ভালো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হয়তো চারা গজায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ দিলে তাদেরকে ক্রয়ের সমপরিমাণ ভালো বীজ দেয়া হবে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ পেলে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কুমারখালীর কৃষক আফিল উদ্দিন বলেন, কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে চার ব্যাগ (চার কেজি) ধানী গোল্ড ধানের বীজ কিনেছিলাম। প্রতি কেজি বীজের দাম ৪৩৫ টাকা। আমি কোম্পানির নির্দেশনা মতো সবকিছু সুন্দরভাবে করেছি। কিন্তু বীজের অর্ধেক পরিমাণ চারা বের হয়েছে আর অর্ধেক মিস গেছে। আমি গরীব মানুষ। ধানী গোল্ড বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই। এই সমস্যার সমাধান চাই। আমার এলাকায় ও আশপাশের এলাকার কৃষকরাও এই বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নয়া কৃষি উদ্যোক্তা যুবক মনিরুল ইসলাম বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপনের জন্য ২০ কেজি ধানী গোল্ড বীজ কিনেছি। ওই কোম্পানির নির্দেশনা মেনে ধান বীজ ছিটিয়ে দিয়েছি বীজতলায়। কিন্তু ৩০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। ফলে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হয়েছি। ধানের চারাগুলোও দুর্বল ও রোগাটে। এ নিয়ে আমরা টেনশনে আছি। ধান লাগানোর জন্য ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। কিন্তু বীজ থেকে চারা না হওয়ায় তিন থেকে চার বিঘা জমিতে ধান লাগাতে পারবো না। ধানী গোল্ড বীজ কিনে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দ্বিতীয়বার বীজ কিনতে হচ্ছে চাষিদের। ডাবল খরচ হচ্ছে। কৃষকরা খুব রাগান্বিত হচ্ছে। কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।

মনিরুল, আফিল উদ্দিন, সাইদুলের মতো একইভাবে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার অসংখ্য কৃষক। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। একই সঙ্গে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

ভাদালিয়া বাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, ধানী গোল্ড ধানের বীজ থেকে ঠিকমতো চারা হচ্ছে না। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি বীজ থেকে চারা হচ্ছে না। ৫-৬ জন কৃষক আমার দোকান থেকে বীজ কিনেছিল। তাদের এমন সমস্যা হওয়ার কারণে তিন-চার দিন আগে থেকে ধানী গোল্ড ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি। আব্দুল হান্নানের মতো অনেক বীজ ব্যবসায়ী এই ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। ধানী গোল্ড বীজ থেকে ঠিকমতো চারা গছাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বীজ ব্যবসায়ীরা। তারাও এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল, কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাস সহ কৃষি কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন না। তারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এখনো কোনো কৃষক অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমরা জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। খুব শীঘ্রই ওই বীজ সংগ্রহ করবো এবং ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করবো। তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ