কুষ্টিয়ায় মসজিদে মাইকিং করে চায়না বেগম নামে ৯০ বছর বয়সী এক লালনভক্ত বৃদ্ধার ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর দাবি, প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরেরও শিকার হয়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে চায়না বেগম বলেন, হত ২৬ জুন (বুধবার) সকাল ৬টার দিকে অভিযুক্তরা তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন। এমনকি রাতের আঁধারে সেখানে তাকে পেলে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
চায়না বেগম জানান, তার স্বামী আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইজির অনুসারী ছিলেন। মৃত্যুর আগে স্বামী তাকে বলে গেছেন, কোথাও জায়গা না হলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতি বছর বাতাসার সিন্নি হলেও করব।
লালন সাঁইয়ের অনুসারী চায়না বেগমও চেয়েছিলেন জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে কাটিয়ে দেবেন। ভিটেমাটিতে প্রতিদিন জ্বালাবেন সন্ধ্যা প্রদীপ। স্বামীর কথা রাখতেই ঘরখানা তৈয়ার করি করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এলাকার লোকজন ওই জায়গা-জমি দখল করতে তার ঘর-বাড়ি ভেঙে ফেলেছে।
চায়না বেগমের বোন জামাই সাধু শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, আমাদের অপরাধটা কী? আমরা সাধু সমাজ কি নিজের জমিতেও আর থাকতে পারব না? আজকে সাধুর ঘর কেন ভাঙা হলো? সাধু সমাজকে কেন অপমান করা হলো? মসজিদে মাইকিং করে লোক জড়ো করে ঘর ভাঙা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুষ্টিয়া সদর থানায় এ ঘটনায় চায়না বেগম অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে ওই এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এনামুল হক, মাতব্বর মোশারফ হোসেন, আনার মন্ডল ও সাইদুল হাজি’র নাম উল্লেখসহ ৪৫-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ওই বৃদ্ধা বাড়ি করেছেন একটি মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। সেখানে যাওয়ার পথ নেই, তাকে দেখারও কেউ নেই। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা হওয়ার আশঙ্কায় তার ঘরটি এলাকাবাসী ভেঙে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই বৃদ্ধা চাইলে আমরা রাস্তার পাশে বাড়ি করে দিতে পারি। কিন্তু উনি সেখানেই থাকতে চান।
অভিযোগের তদন্তভার পেয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুজ্জামান। তিনি বলেন, আজ শনিবার বিকেলে উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। সেখানে একটি সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হবে। না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ