কক্সবাজারে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নানান আয়োজনে পালিত হয় পর্যটন দিবস। এ উপলক্ষে সৈকতে আগত পর্যটকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়ের নেতৃত্বে বিশাল শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়ের সভাপতিত্বে পর্যটন দিবসের অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রধান এ কে এম তারিকুল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান, পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, হোটেল-মোটেল গেস্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার, ট্যুর অপারেটরস্ অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান এমএ হাসিব বাদল ও সভাপতি আনোয়ার কামাল।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। যা এক বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের মোট বরাদ্দ দেওয়া অর্থের দেড় গুণ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কক্সবাজার হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী এবং অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল।’
এতে বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, ট্যুর অপারেটরস্ অ্যাসোসিয়েশন, কিটকট মালিক সমিতি, ঝিনুক-হকার ব্যবসায়ীসহ পর্যটনসেবী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
অনুষ্ঠান শেষে সৈকতে আগত পর্যটকদের ফুল দিয়ে পর্যটন দিবসের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আলোক প্রজ্জ্বলন, ফানুস উড়ানো ও আতশবাজির আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব পর্যটন দিবস ঘিরে নবরূপে সাজানো হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র ও হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসগুলোকে। রুম বুকিংয়ে দেওয়া হয়েছে ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন ও প্রটোকল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববাসীকে পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান সম্পর্কে অবহিত করা।’
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার বছর জুড়েই মুখর থাকে পর্যটকের পদচারণায়। তাদের জন্য একদম অল্প খরচ থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল-মোটেল-রিসোর্টতো আছেই। আছে শতাধিক খাবার হোটেলও। পাশাপাশি সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কমতি নেই প্রশাসনের।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘হোয়াইট অর্কিড’ নামে হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রিয়াদ ইফতেখার জানান, কক্সবাজারে প্রতিদিন লাখো মানুষের আবাসনের সুযোগ রয়েছে। শুধু দেশের যেকোনো শহর নয়, বিশ্বের নানান পর্যটন নগরীর চেয়ে এখানে আবাসন খরচ তুলনামূলক কম বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক রেস্তোরাঁ, কয়েক’শ কনফেকশনারি পর্যটকদের খাবারের সেবা দিয়ে আসছে। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা যেকোন পর্যটক হাত বাড়ালেই পান পছন্দসই খাবার।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি ইউনিট কাজ করছে। তাদের পাশাপাশি নিরাপত্তায় মাঠে কাজ করে জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। মাঠে থাকে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। বিশেষ দিন বলে কোনো কথা নেই। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি রাখা হয়। সার্বক্ষণিক সবকিছু মনিটর করছে অর্ধশতাধিক সিসি ক্যামেরা।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সি-ইন ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ২৪ ঘণ্টাই পুলিশের পাহারা থাকে। এছাড়া হিমছড়ি, দরিয়ানগর ও ইনানি পর্যটন স্পটে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয় রাত ১০টা পর্যন্ত। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দপ্তর বা কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, সমুদ্রে নামার আগে পর্যটকদের জোয়ার-ভাটার সময় দেখে নেওয়ার পরামর্শ সংবলিত নির্দেশনা রয়েছে সৈকতের বিভিন্ন স্পটে। এছাড়া মাইকিং করেও তাদের সতর্ক করা হয়। সৈকতে যখন সবুজ পতাকা ওড়ানো থাকে তখন নামা যায় সৈকতে। আর ভাটার সময় ওড়ানো থাকে লাল নিশানা। তখন সমুদ্রে নামা বিপদজনক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনূর রশীদ জানান, বিশেষ ছুটি ছাড়াও সপ্তাহিক ছুটির দিনে লাখো পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। পর্যটকরা যাতে ছিনতাই, ইভটিজিং, হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা খাবার নিয়ে প্রতারণার শিকার না হন তা নিশ্চিতে পুরো পর্যটন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত টহলে থাকেন। যেকোন অভিযোগ জানাতে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একটি নাম্বার পর্যটন এলাকার তথ্য সেবা কেন্দ্রে দেয়া রয়েছে। যেকোন বিপদ বা প্রয়োজনে সেই নাম্বারে যোগাযোগ করলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ