প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিমভাবে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শরতের শোভা শাপলা ফুল। ইতিপূর্বে জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদী-নালা, খাল, বিল, ডোবা, জলাশয় এবং পুকুরে শাপলা ফুল ফুটতো।
শিশু থেকে বয়স্ক সবার প্রিয় জাতীয় ফুল শাপলা। শাপলা ফুলের সুগন্ধ ও নয়াভিরাম দৃশ্যে প্রাণ জুড়িয়ে যেত সবার। কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে রাজশাহীতে বিলুুপ্তি ঘটছে শাপলা ফুলের। ফলে জাতীয় ফুল শাপলার বিলুপ্তি রোধে এবং জলাশয়গুলোতে এর দৃশ্যমান ধরে রাখতে হলে সরকারিভাবে শাপলা ফুল চাষাবাদ যোগ্য করে তুলতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া উপজেলা এবং পাশ্ববর্তী নাটোর জেলার লালপুর, বাগাতিপাড়ার খাল, বিল, ডোবা, নালায় এক সময় প্রচুর শাপলা ফুল ফুটতো। শিশুদের বিনোদনের উৎস ছিল শাপলা ফুল সংগ্রহ। কিন্তু বর্তমানে সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। বিলে পানি নেই।
বর্ষা মৌসুমে এসব বিলের চিত্র শুকনা, মর্মর। এসব বিলাঞ্চলে সত্যিই শাপলা ফুল বিলুপ্তির পথে। এসব এলাকার বয়স্ক বাসিন্দারা জানান, বিলে একসময় সাদা, লাল, নীল এই তিন ধরনের শাপলা ফুল ফুটতো। জেলায় বর্ষা থেকে শরৎকালে পুকুর, ডোবা, খাল, বিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে আপনা আপনিতেই হয়ে থাকতো এই সাদা, লাল, নীল শাপলা।
কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরৎকালে বিলাঞ্চলে বৈচিত্রময় ইতিহাসের জাতীয় প্রতিক শাপলা রাত্রিতে ফুটতো, সকালে তাকালে দেখা যেত পানির উপর থালার পাতার সাথে দাঁড়িয়ে তার রূপ বিলাচ্ছে। গ্রামের শিশু-কিশোরেরা সকালে মাঠ ও বিলঝিল থেকে লাল, সাদা, শাপলা সংগ্রহ করে বাড়ীতে এসে গলার মালা ও সবজি হিসেবে ভক্ষণ করতো। শাপলার ভেট বা ঢ্যাপগুলো খৈ বানিয়ে খেলা করতো। বিনোদনের মাধ্যম ছিলো শাপলা ফুল। কিন্তু বর্তমানের চিত্র পুরোটাই আলাদা। জলবায়ু পরিবর্তন, খাল, বিল, জলাশয় ভরাট ও কৃষি জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগে দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল।
রাজশাহী বাঘা উপজেলার বাসিন্দা শতবর্ষী আফছার আলী নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমানে পদ্মা ফুল তো পাওয়াই যায় না। আগে এই সময় গ্রামাঞ্চলে খাল, বিল, ডোবা ও পুকুরের নিম্নঞ্চালে যেখানে সেখানে শাপলা ফুল ফুটে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে বিলঝিল ও পুকুরগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে শাপলা ফুল আর ফুটে না। কৃষি জমিতে লাঙ্গল চাষে শাপলা বীজ পচে নষ্ট হওয়ার কারণে দিন দিন শাপলা ফুল বিলুপ্তি হতে চলেছে। জাতীয় ফুল শাপলা দৃশ্যমান ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে এই ফুল চাষাবাদ যোগ্য করে তুলতে হবে বলে জানান তিনি।
বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিমভাবে জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে শাপলা ফুলের বিলুুপ্তি ঘটছে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় সহায়তার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে শাপলা ফুল চাষাবাদ যোগ্য করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ