নাম তার মিনু ঢালী। পেশায় সাপুড়ে। ৬৫ বছর বয়সী এ সাহসী ব্যক্তিটির বসবাস শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি গ্রামে। নয়া শতাব্দীর মুখোমুখি হয়ে তিনি বলছিলেন, ‘দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে চরাঞ্চলের বিষধর সাপ নিধন করতেছি। কত সাপ যে ধরেছি তার সংখ্যাও বলতে পারব না। তবে ১০ হাজারের বেশি বিষধর সাপ নিধন করেছি। এই বিষধর সাপ ও তার ডিম নিধন করা না গেলে চরাঞ্চলের মানুষ সাপের ভয়ে মাটিতে পা ফেলতে পারতেন না।’
মিনু ঢালী জানান, তার নিধন করা সাপের মধ্যে রয়েছে- বিষধর কিং কোবরা, জতিসাপ, গোখরা ও পানস। এসবের মধ্যে ২০০০ সালে অপরিচিত একটি সাপ ধরা পড়ে। পরে জানতে পারেন সাপটি বিরল প্রজাতির রাসেলস ভাইপার। ২০২০ সালের পরে এই পর্যন্ত তিনি আরো ২টি রাসেলস ভাইপার ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি গতরাতেও উপজেলার চরভাগা ও নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার এলাকার বসতবাড়ি থেকে দুইটি বিশাল আকৃতির বিষধর সাপ ধরেছেন। একটির সাথে ৩৬টি ডিম ছিল। সাপ দুটি তিনি তার বাড়িতে বন্দি করে রেখেছেন। এর দুইদিন আগে ৩২টি সাপ তিনি অন্যত্র হস্তান্তর করেছেন। এ ছাড়াও অনেক বিরল প্রজাতির সাপ বন বিভাগে হস্তান্তর করেছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন।
এ সাপুড়ে জানান, ‘তিনি ৩৬ বছর ধরে সাপ ধরে এলাকাবাসীর সেবা করে আসছেন। যেখান থেকে সংবাদ আসে সেখানে গিয়েই তিনি সাপ ধরে মানুষকে বিপদমুক্ত করেন। এই পর্যন্ত তিনি ৩টি রাসেলস ভাইপার ছুরির চর, উত্তর তারাবুনিয়া ও কাচিকাটা থেকে ধরেছেন। সাপের ছোবলে ব্যবসায়ী সেলিম মাদবর ও প্রবাসী নাজমুল মারা গেছেন। তাই সাপ দেখলেই এলাকাবাসী তাকে খবর দেয়।’
মিনি ঢালী ধারণা করছেন, ২০২০ সানে উজান থেকে যে ঢলের পানি নেমে আসে তার সাথে রাসেলস ভাইপার আসে। এই সাপগুলো খুব বিষাক্ত হয়। এই সাপ ডিম না দিয়ে একসাথে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। তাই দ্রুত বংশবিস্তার হয়।
সখিপুর চরাঞ্চলের বাসিন্দা এনায়েতুল্লাহ বলেন, মিন ঢালী প্রায় ৩ যুগ ধরে সাপ ধরছেন। কোথাও থেকে কোন সংবাদ পেলে ছুটে গিয়ে সাপ ধরেন। মানুষকে সাপের আতঙ্ক থেকে মুক্ত করেন। সাপুড়ে মিনু ঢালী চরাঞ্চলের মানুষের গর্ব।
বিষধর সাপের ছোবলে কেউ আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য বিভাগে কোনো চিকিৎসা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান জানান, বিষধর রাসেলস ভাইপার, কিং কোবরা ও কেউটা সাপে কাউকে ছোবল দিলে একই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। জেলা সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত রয়েছে। এই বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। সাপের কামড়ের রোগী হাসপাতালে আসলেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ