বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

কুশখড়ের ঝাড়ু বানিয়ে চলে হিমতির দম্পতির সংসার

প্রকাশনার সময়: ২১ জুন ২০২৪, ১৭:৩৮

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম তিলাইপাড়া। গ্রামে অন্তত ৩০৫ পরিবারের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কুশখড়ের ঝাড়ু তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই এই গ্রামটি সকলের কাছে ঝাড়ু গ্রাম নামেই সকলের কাছে পরিচিত। এই গ্রামেরই ধরণী কর্মকার ও হিমতি কর্মকার দম্পতি। ঝাড়ু তৈরি ও বিক্রি পেশা দিয়েই চলছে তাদের সংসার।

জানা যায়, হিমতি কর্মকার ও ধরণী কর্মকার দম্পতি তিন সন্তানের জনক-জননী। ২৪ বছর আগে বিয়ে হয়েছে তাদের। এ পেশা থেকে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ২০১৬ সালে বড় মেয়ে রানী কর্মকারকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কণিকা কর্মকার ফুলবাড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ও এইচএসসি ভর্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে আর রুমন কর্মকার একই বিদ্যালয় থেকে আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

হিমতি কর্মকার (৪১) বলেন, বিয়ের পর শাশুড়ির কাছে কুশখড় দিয়ে ঝাড়ু বানানো শিখি। সেই ঝাড়ু বানিয়েই এখন চলে তাদের সংসার, দিয়েছেন বড় মেয়ের বিয়ে। এ ছাড়াও যা আয় হয় তা দিয়ে মেয়ে ও ছেলের পড়াশোনা চালাচ্ছেন। গ্রামে সবাই ঝাড়ু বানায়। সেই ঝাড়ু বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বিক্রি করে যা লাভ হয় তাই দিয়ে সংসারের ভরণ-পোষণ চলছে। ঝাড়ু জন্য প্রয়োজনীয় কুশখড় ফুলবাড়ী, দিনাজপুর ও বিরামপুরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। পরে সেগুলোকে ঝাড়ু তৈরির উপযুক্ত করে ঝাড়ু তৈরি করেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০টি ঝাড়ু তৈরি করতে পারেন।

স্থানীয় হাটবাজারে তৈরিকৃত প্রতিটি ঝাড়ু ২০ থেকে ২৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেন। যেগুলো পরবর্তীতে দোকানদারেরা প্রতিটি ঝাড়ু ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। এক কথায় এই ঝাড়ু বিক্রির অর্থ দিয়েই চলে তাদের পুরো সংসার। লাভ কম, তবু যা আয় হয় তা দিয়েই ভালোভাবেই পার হয় দিন। হিমতি কর্মকার কিংবা তার স্বামী ধরণী কর্মকারও এই পেশায় আছেন এমনটি নয়, গ্রামের জসিম হাঁসদা, পুতুল হাঁসদা, রমণী কর্মকার, প্রদীপ কর্মকার, পরিমল সরকার ও রোজিনা কর্মকারসহ এই গ্রামের অন্তত ৩৫টি পরিবারের মানুষ ঝাড়ু তৈরি ও বিক্রির পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ঝাড়ু তৈরি ও বিক্রির পেশায় জড়িত বলে এই গ্রামকে মানুষ ঝাড়ুর গ্রাম নামেই চেনে।

ঝাড়ু তৈরির কারিগর জসিম হাঁসদা ও পুতুল হাঁসদা বলেন, ‘ঝাড়ু তৈরি করতে অনেক কষ্ট। কুশখড় সংগ্রহ করা মুশকিল। সীমান্ত এলাকা ছাড়া কুশখড় পাওয়া যায় না। ঝাড়ু পাইকারি মূল্যে বিক্রি করলে কম লাভ হয়। অনেকে সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা মূল্যে বিক্রি করি। পাইকারি বিক্রি করলে পাওয়া যায় ২০ টাকা আর খুচরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করা যায়।’

সরেজমিনে তিলাইপাড়া গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে নিজ নিজ উপকরণ নিয়ে বসে ঝাড়ু বানাচ্ছেন গ্রামের নারী ও পুরুষরা। ঠিক তেমনি বাড়ির আঙিনায় স্বামীকে নিয়ে ঝাড়ু বানাচ্ছিলেন হিমতি কর্মকার। তাদের মধ্যে কেউ কুশখড়গুলো বেছে রাখছিলেন, কেউ সোজা করছিলেন। আবার কেউ সেগুলো বেঁধে ঝাড়ুতৈরিতে রূপান্তিত করছিলেন। তাদের আঙিনাজুড়ে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে কুশখড় আর তাদের তৈরি কুশখড়ের ঝাড়ু।

ফুলবাড়ী পৌর বাজারের ঝাড়ু বিক্রেতা প্রদীপ সরকার ও আহম্মেদ আলী বলেন, শিবনগর ইউনিয়নের তিলাইপাড়া ঝাড়ু পাড়া গ্রামের লোকজন তাদের তৈরি কুশখড়ের ঝাড়ু পাইকারি মূল্যে দিয়ে যান। প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ