ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশনার সময়: ১৩ জুন ২০২৪, ১৭:১১

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা পালিত হতে যাচ্ছে। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আগামী সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করবেন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। কোরবানি উপলক্ষে পশু কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কোরবানিদাতা ও ব্যবসায়ীরা। তবে পশুর হাটে ক্রেতার উপছে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি কম হচ্ছে অভিযোগ বিক্রেতাদের। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেনো কোনভাবেই ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া খামারিরা এবার গরু মোটা-তাজাকরণে ওষুধ প্রয়োগ থেকেও বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩টি। তা হল উলিপুর, দূর্গাপুর ও থেতরাইর হাট। এছাড়াও অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচার সুবিধা রয়েছে। চলতি বছরে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৮ হাজার ১৫২টি। প্রস্তুত রয়েছে ৫৩ হাজার ৪৮টি। অতিরিক্ত উদ্ধৃত্ত রয়েছে ১৪ হাজার ৮৯৬ টি।

কৃষক ও খামারির কাছে কোরবানির যোগ্য পশু রয়েছে ৫৩ হাজার ৪৮টি। গরু ১৫ হাজার ১১৮টির মধ্যে ষাঁড় ১১ হাজার ৭৩৮টি, বলদ ১৬১টি, গাভী ৩ হাজার ২১৯ টি। মহিষ ১৮৯ টি, ছাগল ৩২ হাজার ৫৩৭ টি ও ভেড়া ৫ হাজার ২০৪ টি। তাছাড়া কোরবানি পশুর হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য ১টি করে ভ্যাটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া পশুর হাটে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।

উপজেলায় বৃহত্তম কোরবানির পশুর হাট উলিপুর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠ। সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার বসে। এছাড়া দূর্গাপুরের হাট সপ্তাহে দু'দিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার এবং থেতরাই হাট সপ্তাহে দু'দিন রোববার ও বুধবার বসে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন কোরবানি পশুর হাট গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির জন্য উপযুক্ত দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠেছে। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর মালিক, খামারি ও ব্যবসায়িরা। গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের পশুর দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যেকারণে এবারের কোরবানি ঈদে লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে গরুর চাহিদা একটু কম। তবে পশুর হাট গুলোতে মাঝারি সাইজের গুরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশী আগ্রহী নয়। এছাড়া অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে দাড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

থেতরাই পশুর হাটে আসা ক্রেতা চাঁদ মিয়া বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গুরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা দেশি গুরুর দাম একটু বেশি হাঁকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সে তুলনায় বিক্রি কম। তার পরেও কোরবানির জন্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়ে পশু কিনলাম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারী ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি। সঙ্গে ছাগলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি।

এছাড়া পশু ক্রেতাদের মধ্যে আব্দুর রশিদ, রঞ্জু মিয়া ও ছাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারে একটু কোরবানি পশুর দাম বেশি। দাম বেশি থাকায় এ হাটে পশু ক্রয় করা সম্ভব হলো না। পরের হাটে দেখে ক্রয় করতে হবে। এছাড়া অনেকে সাধ্যের মধ্যে কোরবানির পশু ক্রয় করছেন বলে জানান তারা।

পশু বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, বাসায় পালন করা গরু আজ হাটে নিয়ে এসেছি। অনেকে দর কষাকষি করছেন। কেউ দেখে যাচ্ছেন। পরে গরুটি ১ লাখ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবারে কোরবানির পশুর বাজার অনেক ভালো।

গরুর ব্যবসায়ী সঞ্জু মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবারে পশুর বাজার অনেক ভালো। ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও পশুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাকেনা কম হচ্ছে। কেউ ক্রয় করছেন আবার কেউ দর কষাকষি করে ফিরে যাচ্ছেন।

থেতরাই পশুর হাটের ইজারাদার বাবুল মিয়া জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো কোরবানি পশুর হাট বসেছে। এখানে স্থানীয়ভাবে কোরবানি দাতারা সুলভ মূল্যে কোরবানির পশু ক্রয় করে থাকেন। কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই কৃষক ও খামারিরা পশু বিক্রয় করে থাকেন। এছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতারা যেনো নিরাপদে কেনাবেচা করতে পারে সে জন্য পশুর হাটে প্রশাসনিক নজরদারি রয়েছে। বুধবার হাটের দিন ছিল, মোটামুটি কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে আগামী রোববার হাট আরও বড় হবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। এবারের কোরবানির হাট জমে উঠেছে।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মর্তুজা জানান, পশুহাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। গরুর হাটে জাল নোট অজ্ঞান পা‌র্টির সদস্যদের ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরধারী রয়েছে। এছাড়া ব্যাপারীদের পশু আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়তি নজরদারী রয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানুর হক জানান, উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদার থেকেও ১৪ হাজার ৮৯৬ টি বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হাওয়ায় উপজেলার খামারি ও কৃষকেরা ঘাসের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। ফলে গতবারে যেমন বাজার স্বাভাবিক ছিল, অনুরূপভাবে এবারও স্বাভাবিক থাকবে। তাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ