ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

‘আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি নাই পাকা ঘর পাবো’

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুন ২০২৪, ১৬:৪০

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে লালমনিরহাটে কালীগঞ্জে পাকা বাড়িঘর পাচ্ছেন ৮৭৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে আবেগে আপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত হয়েছেন এসব পরিবারের মানুষেরা।

আগামী মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে সারাদেশে একযোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে থাকতে হতো ছনের ঘরে দুর্বিষহ কেটেছে ৪০ বছর। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা বেলী বেগম বলেন, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হইব। সবকিছু স্বপ্ন লাগতেছে।

কমলা বেগম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি বাজার এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণের বাসিন্দা।

কমলা বেগম জানান, দিনমজুর বাবার সংসারেও অভাবের মাঝে বড় হয়েছেন। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে দিনমজুর দিয়ে সচল রেখেছেন চার সদস্যের পরিবারের চাকা। জীবনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পেটের ভাত ছাড়া জোগাড় করা ছাড়া কোনো সম্পদ বা বাড়ি করতে পারেননি। অবশেষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি।

জমি আর পাকা বাড়ি পেয়ে ফজলে করিম বলেন, পরিশ্রম করে শরীরের রক্ত পানি করেও একখণ্ড জমি কিনতে পারি নাই। এখন শেখের বেটি হাসিনা হামাক জমিসহ পাকা বাড়ির মালিক করে দেছে বাহে। আল্লায় শেখের বেটিকে ম্যালা (অনেক) দিন বাঁচি রাখুক। হামরা নামাজে বসে প্রতিদিন দোয়া করি তার জন্য।

একই আশ্রয়ণে জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছেন ষাটোর্ধ্ব দম্পতি ফজলে করিম । এক সময় তাদের নিজের জমিসহ পাকা বাড়ি ছিল। কিন্তু ব্যবসায় লোকসানে পড়ে ছেলে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেন। এরপর তাদের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ কয়েক বছর অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। ভূমিহীন ও গৃহহীন হিসেবে তারাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতাংশ জমিসহ পাকা বাড়ি।

এই দম্পতি বলেন, ব্যবসায়িক লোকসানে বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে পথে বসে গেছিলাম। হতাশায় ডুবে ছিলাম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আবার মাথাগোজার ঠাঁই পাইলাম। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও পাইলাম আমরা।

একই আশ্রয়ণের অঞ্জলি রানী বলেন, সারা জীবন কষ্ট করে কামাই (আয়) করেও টিনের ঘর করবার পারি নাই। এখন নিজের নামে দুই শতক জমিসহ পাকা বাড়িতে থাকছি বাহে। সবায় (সবাই) কয় বাড়িও খুব মজবুত কইরে বানাইছে। সবই ভগবানের কৃপা। খুব ভালোই আছি বাপু। শুধু কমলা বা অঞ্জলি রানী নয়।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের অনেক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করছেন। যাদের একখণ্ড জমি ছিল না, একটা বাড়ির জন্য রোদ বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও মিলাতে না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। এমন ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারগুলোকে খুঁজে আশ্রয়ণের জমিসহ বাড়ি করে দিচ্ছে সরকার। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতাংশ জমির দলিল ও দুই কক্ষের একটি পাকা বাড়ি পেয়ে বেজায় খুশি এসব ছিন্নমূল পরিবার। এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে খাস জমি উদ্ধার করে ১৯১৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করা হচ্ছে সরকারি খাস জমিতে। কোনো এক সময় এসব খাস জমি অন্যের দখলে ছিল। সরকার রাজস্ব হারালেও কেউ কেউ ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ নিয়ে নিজেরা ভোগ করতেন। এসব সব খাস জমি উদ্ধার করে সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেই জমির দুই শতাংশ হারে সুফল ভোগীদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে সরকার। প্রতিজন সুফলভোগী জমির ওপর নির্মিত একটি পাকা বাড়িও পেয়ে যাচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষা মুড়ি বাজার এলাকার আশ্রয়ণটিকে মডেল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির রঙে ভিন্নতা নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণের মানুষদের যাতায়াতের জন্য আশ্রয়ণ থেকে মূল সড়কে ওঠার রাস্তাও পাকা করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলে এটিকে দেখতে অনেকটাই শহরের আবাসিক কোনো এলাকার মতোই লাগছে। নির্মাণ কাজ শেষ (১১জুন) সকাল ১১টায় সব সুফলভোগীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চাবি হস্তান্তর করা হবে। কাজ শেষ হওয়ায় কিছু পরিবার ব্যবহার করছেন তাদের স্বপ্নের পাকা বাড়ি।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও গৃহনির্মাণ প্রকল্পের সদস্য সচিব ফেরদৌস আলম জানান, সরকারের দেওয়া ডিজাইন ও সিস্টেম অনুযায়ী প্রত্যেকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। মহিষামুড়ি বাজার এলাকার আশ্রয়ণটি মডেল হিসেবে রঙে ভিন্নতা আনা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সুফলভোগীসহ স্থানীয়রাও প্রশংসা করেছেন। আশ্রয়ণে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের সব দপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব পরিবারে সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টাও রয়েছে।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ