ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা

প্রকাশনার সময়: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:১০

আর মাত্র কয়েকদিন পর পালিত হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব তথা কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন গাজীপুর কালিয়াকৈরের বিভিন্ন হাট-বাজারের কামার শিল্পীরা।

দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানি ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ, উট কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়। ঈদের দিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কোরবানির পশু জবাই চলে। এসব পশুর গোশত কাটতে দাঁ-বটি, ছুরি, ধামা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। যেহেতু কোরবানির পশু কাটা-কুটিতে চাই ধারালো দাঁ, বটি, চাপাতি ও ছুরি। তাই তো কামারেরা এখন এসব তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন হাঁট-বাজারে কামারশালা গুলো ব্যাপকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দাঁ, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এসব কামারের দোকানগুলো । দম ফেলারও যেন সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন শিল্পীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলে তাদের। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির মৌসুমে ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কামারদের।

কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দাঁ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৪৫০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজি উপরের নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়।

পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন কামারদের দোকানে। আগে যেসব দোকানে দু’জন করে শ্রমিক কাজ করতো, এখন সেসব দোকানে ৩-৫ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন।

কামার দোকানদারদের অভিযোগ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও লোহার দাম বেড়ে গেছে। অপরদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ ঈদ উপলক্ষে দাঁ, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেয়ার জন্য ৩৫ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ১২০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কামারদের বেচা-কেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। কয়লার দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে কামারদের কর্মব্যস্ততা।

সাহেব বাজারের কর্মকার গোপাল সরকার বলেন, সারা বছর তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির ঈদের সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। ঈদ চলে গেলে আমাদের বসে থাকতে হয়, কাজ থাকে না।

উজ্জল সরকার নামে এক কর্মকার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি তত বাড়ছে।

অন্য আরেক কর্মকার সুধির সরকার বলেন, সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি। তবে এবারের ঈদে চাপ বেশি।

কামারের দোকানে চাপাতি বানাতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শাজাহান আলী জানান, আর কয়দিন পর কোরবানি ঈদ। তাই চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে আসছি। আগে যে চাপাতি কিনতাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা সেই চাপাতি এখন নিলাম নিজে লোহা দিয়ে বানিয়ে নিলাম ৬০০ টাকা করে।

বটি বানাতে আসা ইব্রাহিম মিয়া জানান, আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি। আগে যে বটি বানাতাম ২০০-৩০০ টাকা সে বটি এখন বানাতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। তবে কেজি প্রতি নিচ্ছে ৭০০ টাকা।

নিজের লোহা দিয়ে চাপাতি বানাতে আসা আশিক জানান, আগের চেয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। নিজে লোহা দিলাম তারপরও মুজুরী চায় ৭০০-৮০০ টাকা। তারা বলছে কয়লার দাম নাকি বেশি।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ