মাগুরায় আলোচিত পলিথিন ডাক্তার খ্যাত মাসুদুল হকের অপচিকিৎসায় সীমু খাতুন (১৯) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মৃত্যুর পর উন্নত চিকিৎসার নামে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ স্বজনদের।
মৃত মোছা. সীমু খাতুন মাগুরা সদর উপজেলার বেলনগর গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের মেয়ে এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের মধুখালীর কামারখালী আড়পাড়া গ্রামের মো. নূর আলীর স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের পূর্বপাশে অবস্থিত ডাক্তার মাসুদুল হকের মালিকানাধীন জাহান প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বুধবার (২৯ মে) সকালে সীমু খাতুন নামে ওই প্রসূতির সিজারিয়ানের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। আর সেই অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার মাসুদুল হক। এরপর ওই প্রসূতির নানা শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়া পরে তার মৃত্যু হয়।
প্রসূতির বাবা মনিরুল ইসলামসহ পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার (২৯ মে) সকাল ১০টায় সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য সীমুকে শহরের জাহান প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। এ সময় ডাক্তার মাসুদুল হক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সকাল ১১টায় সীমুকে তড়িঘড়ি করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন। এতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান সুস্থ থাকলেও মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ প্রেসার বৃদ্ধি পায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়। এভাবে সারা দিন ব্লিডিং বন্ধ না হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু জানতে পেরে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন এবং ডাক্তার মাসুদুল হক নিজেই তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। এ সময় স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য কুড়ি হাজার টাকাও দেন।
পরে সীমু খাতুনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই সাথে চিকিৎসক এটাও জানান যে রোগীকে ফরিদপুর নিয়ে আসার অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, ফরিদপুর মেডিকেল থেকে রাত ১টার দিকে সুমী খাতুনের মরদেহ মাগুরার বেলনগর গ্রামে তার বাবার বাড়িতে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ জন্য দায়ী ডাক্তার মাসুদুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে মাগুরা জাহান প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডা. মাসুদুল হক বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর থেকে প্রসুতির প্রেশার হাই হয়ে শরীরে কাঁপুনি দিতে থাকে। তখন তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি সীমু খাতুন মারা গেছে। চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে অস্বীকার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাগুরা জাহান ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে ২০১৯ সালের ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মাগুরার পলিথিন ডাক্তার আখ্যা দিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রচার হয়। পরে আদালতে এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছিল। সেই সাথে মাগুরা থেকে এই চিকিৎসককে বিতাড়িত করতে একাধিকবার ঝাড়ুমিছিল মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সাধারণ মানুষ।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ