ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ভোলায় এখনো পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৪, ১৭:১৫

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে নদীবেষ্টিত জেলা ভোলা। ঝড় এবং বিষাক্ত সাপের কামড়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো পানিবন্দী আছেন লক্ষাধিক মানুষ। দুর্গত মানুষ প্রায় আড়াই হাজার। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে আড়াই হাজার ঘরবাড়ি। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার বসতঘর। শহরের ৫০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সামান্য সময়ের জন্য স্বাভাবিক হলেও পুরো জেলা এখনো অন্ধকারে রয়েছে।

ভোলা সদর উপজেলা, দৌলতখান, লালমোহনে গাছচাপায় ৫ জন এবং বোরহানউদ্দিনে জোয়ারে ভেসে আসা বিষধর সাপের কামড়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তীব্র বাতাসে লালমোহনের পশ্চিম চরউম্মেদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে টিনের ঘরে গাছ পড়ে মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দৌলতখানে গাছ উপড়ে পড়ে ঘরের ভেতর চাপা পড়ে মাইশা নামের ৪ বছরের এক শিশু, জোয়ারের পানিতে সাপের কামড়ে বোরহানউদ্দিনের পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে আবু সায়িদ মাঝি (৬০), গাছ ও ঘর চাপায় ভেদুরিয়া ৫নং ওয়ার্ডে মো. ফারুক হাজারী (৫০) এবং ঘর চাপায় দৌলতখাান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে আমজাদ হোসেন (৫৫) নিহত হয়েছেন।

৭টি উপজেলায় বিশেষ করে চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন, ঢালচর ইউনিয়ন, চরজহির উদ্দিন, সোনারচর, চর ড্যামপেয়ারসহ মনপুরা উপজেলার অধিকাংশ মৎস্য খামারের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ায় মৎস্যচাষিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় মৎস্য বিভাগ। ৫ হাজার ৮৬০টি পুকুর, ৯৫০টি মৎস্য ঘের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসন।

কৃষি বিভাগ জানায়, ঝড়ের তাণ্ডবে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। এখনো জোয়ারের পানিতে ডুবে রয়েছে ২০টি গ্রামসহ ৭০টি বিচ্ছিন্ন চরের অধিকাংশ ফসলি জমি। জেলায় প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমির সবজি এবং ১৪ হাজার ১০১ হেক্টর জমির আউশ ও বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মনপুরা চর জহির উদ্দিন, ঢালচর কুকরি-মুকরিসহ চরফ্যাশনের মুজিবনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ কাঁচা রাস্তা জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।

৩ দিন পর ভোলার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সকল নৌ-রুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরের পর থেকে স্বাভাবিক হয়েছে। জেলায় ৪০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এখনো পুরো জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মোবাইল অপারেটরসহ সকল ধরনের ইন্টারনেট সেবা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।

চর জহির উদ্দিন থেকে মৎস্য ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, এখানকার প্রায় পরিবারের কাঁচা ঘরবাড়ি জোয়ারের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। তারা এখনো জহির উদ্দিনের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তবে জেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার সরবরাহের কথাও জানালেও চরের বিপুল পরিমাণ পশু নদীতে ভেসে গেছে, অবশিষ্ট পশুগুলোর জন্য কোনো প্রকার খাবারের ব্যবস্থা করেনি বলেও জানান তিনি।

মনপুরার বেড়িবাঁধ ভেঙে আটকা পড়ে আছে কয়েক হাজার পরিবার। চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নেরও একই অবস্থা। সেখানে ভাটার সময় জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও আতঙ্কে রয়েছেন ফের জলোচ্ছ্বাসের।

এ দিকে ৭০টি বিচ্ছিন্ন চরের আশ্রয়কেন্দ্রসহ ভোলার মৌলভীরহাট ফাজিল মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্র, কাচিয়া বাঘাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র, ধনিয়া তুলাতুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র, কাচিয়া মাঝেরচর আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলের‍ র‌্যাবের পক্ষ থেকে ভোলা র‌্যাব ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মো. জামাল উদ্দিন সদর উপজেলার শিবপুর ও ধনিয়া ইউনিয়নের অর্ধশত পানিবন্দী পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

জেলা প্রশাসক মো. আরিফুজ্জামান জানান, আপাতত ৩৭৫ টন চাল এবং নগদ ১৮ লাখ টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের মাধ্যমে এ বরাদ্দ আরও বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে আমরা জানাবো। সেক্ষেত্রে দ্রুত রেমালের ক্ষতি পুরোপুরি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি। এ দিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় এবং তৃতীয় দিনের মতো প্রচণ্ড বাতাস থাকায় এখনো আতঙ্কে রয়েছেন ভোলার বিচ্ছিন্ন চরবাসী।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ