ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিনাজপুরের বাজারে উঠেছে লিচু, দাম চড়া

প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৪, ১৬:৫৪

দিনাজপুর শহরের নিউমার্কেটে কিছু দিন আগে থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সরব লিচুর বাজার। বাজারে উঠেছে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। এবার সরবরাহ কম থাকায় লিচুর দাম বেশি। এতে ক্রেতারা অখুশি হলেও কৃষক ও ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক।

দিনাজপুর জেলা শহরের নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতি এক হাজার মাদ্রাজি লিচু ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়।

লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বাজার শুরু থেকে চড়া। গতবারের চেয়ে জাতভেদে প্রতি হাজার লিচু ৭০০-৮০০ টাকা বেশি দাম রাখতে হচ্ছে। কারণ, জেলার কিছু কিছু জায়গায় লিচুর ফলন একেবারেই কম। তাছাড়া প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে লিচুর মুকুল ঝরে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে, ইতিমধ্যে ফাটতে শুরু করেছে। আর তাই অনেক কৃষক লিচু পেড়ে আগাম বাজারে আনতে শুরু করেছে।

বুধবার (২৯ মে) নিউমার্কেটে ২০০ মাদ্রাজি লিচু ৬০০ টাকায় কিনেছেন আব্দুস সালাম তিনি বলেন, ‘‘দু- একটা লিচু খেয়ে দেখলাম কিছুটা টক’’ এই লিচু আরও এক সপ্তাহ পরে বাজারে আনলে ঠিকঠাক স্বাদ পাওয়া যেত। কিন্তু নাতি-নাতনিদের আবদার রাখতে কিনতেই হলো।

লিচু ব্যবসায়ী কেরামত আলি বলেন, ‘কেবল মৌসুমটা শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুরিয়ারে পাঠানো হয়। এখনও সেভাবে বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। যাঁর গাছে ফল আছে, তারা এবার ভালো দাম পাবেন। গতবার তাপপ্রবাহে কৃষক লিচুতে লোকসান খেয়েছেন। তাপমাত্রা এবারও যদি একই রকম থাকে, তাহলে আর রক্ষা নাই। অনেক ব্যবসায়ীই আছেন, কৃষকের কাছে পাঁচ বছরের জন্য বাগান চুক্তি নিয়েছেন। তাপ প্রবাহের কারণে লিচুর ক্ষতি বেশি হলে লোকসানের সীমা থাকবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জেলায় (৫ হাজার ৪৮৯) হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে (৩ হাজার ২৩৮) হেক্টরে বোম্বাই জাতের লিচু, (১ হাজার ৭৮) হেক্টরে মাদ্রাজি, (৭০৭) হেক্টরে চায়না থ্রি, (৩১০) হেক্টরে বেদানা, (১৩২) হেক্টরে চায়না টু এবং (২৪) হেক্টর জমিতে কাঁঠালি জাতের লিচু আবাদ হয়েছে। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে (৩২ হাজার ১১৭) মেট্রিক টন।

দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর, মাসিমপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর ও বিরলের মাধববাটি, রবিপুর এলাকায় লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার অধিকাংশ মাদ্রাজি ও বেদানা গাছে ফলন কম। কোনো কোনো গাছে একেবারেই ফল নেই। মাঝে দু-একটি গাছে ফল থাকলেও ইতিমধ্যে ঝলসে যেতে শুরু করেছে। কিছু-কিছু গাছের ফল ফেটে গিয়ে পড়ে যেতে শুরু করেছে।

মাসিমপুর এলাকার লিচুচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘আমার বাগানে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচুর ১০০টি গাছ আছে’’ নিজের চোখ দিয়েই আপনারা দেখেন, ফলন আছে কি না?’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার মুকুল এসেছিল খুব বেশি। কিন্তু রোদে সব পুড়ে গেছে। এখন গাছগুলোতে ৪০ শতাংশ লিচুই পাওয়া যাবে না। আকারও ছোট হয়েছে। এবার ৩৮টি গাছে কোনো ফলই ধরেনি।

আউলিয়াপুর এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘রোদে সব শেষ হয়ে গেছে। তবে কয়েক দিন আগে বৃষ্টিটা হওয়ায় বোম্বাই জাতের লিচুর কিছুটা রক্ষা হয়েছে। এই তাপপ্রবাহ চলতে থাকলে বোম্বাই লিচুও ধরা খাবে। গতবারও তো দাবদাহের কারণে লিচুতে লোকসান গুনেছি। ছয় লাখ টাকায় বাগান চুক্তি নিয়েছি। এবার মনে হচ্ছে খরচটাও উঠবে না।

লিচুর রাজ্য বলে খ্যাতি আছে দিনাজপুরের। চাষের জন্য উপযোগী বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহের কমতি নেই। এখানে চাষ হয় মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না থ্রি, কাঁঠালি জাতের লিচু। জেলার ১৩টি উপজেলায় কমবেশি সব জায়গায় লিচুর চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বট হাট, চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়।

বিরলের রবিপুর এলাকার লিচুচাষি মো. শাহীন আলম বলেন, ‘বোম্বাই জাতের ৮০০ গাছের বাগান আমার। এবার টানা এক মাস প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ গেল। বোম্বাই জাতের লিচু সাধারণত দেরিতে হয়। কয়েক দিন আগে বৃষ্টিটা হওয়ায় কিছুটা উপকার হয়েছে। না হলে মাদ্রাজির মতো বোম্বাই লিচুর সমস্যা হতো। গত বছর শেষ মুহর্তে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসের কারণে অন্তত ৪০ শতাংশ লিচু গাছেই ঝলসে যায়। এবারও যদি তাপমাত্রা বেশি হয়, তাহলে শ্রম দেওয়াটা হবে একদম বেকার।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলছেন, এবার লিচুতে মুকুল আসা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু পরে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় মাদ্রাজি লিচুর কিছুটা ক্ষতি হলেও অন্যান্য জাতের লিচুর ক্ষেত্রে সে-রকম প্রভাব পড়েনি। এবার বোম্বাই ও চায়না থ্রিতে ভালো ফলন হয়েছে। লিচু ফেটে ঝরে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাঁরা নিয়মিত সেচ দেওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন, তাদের গাছে এই সমস্যা হবে না। গত বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু গাছের ফসল নষ্ট হয়েছিল। আশা করি, এবার কৃষকেরা সঠিক নিয়মে পানি ও সার ব্যবস্থাপনা করেছেন। আমরাও নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছি।

নয়াশতাব্দী/এনএইচ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ