পবিত্র কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র কিছু দিন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশের পৌর এলাকার বাসিন্দা আছর আলী স্থানীয় বাজারে ঈদের আগে ভাগেই মসলা কিনতে যান, ওনার ধারণা ছিল আগে কিনলে অফেক্ষাকৃত একটু সস্তায় মসলা কিনতে পারবেন। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখেন, সব ধরণের মসলার দাম আকাশ চুম্বি, দাম শুনে তার বেহুস হবার উপক্রম। কেননা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চলনবিলাঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে সকল প্রকার মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।
মূলত পনের দিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে মসলার দাম বেড়েছে। যেমন মোটা কালো এলাচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। লবঙ্গের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ভাবে সকল প্রকার মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন, মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাই তারা বলছেন, গরীব মানুষেরা বছরের ওই কোরবানির ঈদে একদিন গোস্ত খেয়ে থাকেন। কিন্তু মসলার যে দাম তাতে এ বছর মসলা ছাড়াই গোস্ত খেতে হবে।
বুধবার (২৯ মে) বিলপাড়ের তাড়াশ, সলঙ্গা, বিনসাড়া, নওগাঁ, গুল্টাহাট, চান্দাইকোনা, চাঁচকৈড়, বামিহাল, ধরইলসহ, বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মসলার হাট এবং বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকায়। যা ১৫ দিন পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকায়। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকায়। প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। প্রতি কেজি গোল মরিচ বিত্রিু হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২০০০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি কালো এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায় যা পূর্বে ছিল ২৩০০ টাকা। প্রতি কেজি সাদা এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকা যা পূর্বে ছিল ২৭০০ টাকা। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। প্রতি কেজি হলুদ (গোটা) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। প্রতি কেজি তেজপত্র বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। যা পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১০০থেকে ১১০ টাকায়।
এটাই শেষ নয় বাজারে বিভিন্ন প্যাকেটজাত গুড়া মসলার দামও প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তাড়াশ বাজারের মসলা ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দুই সপ্তাহ পূর্বেও বগুড়া, রাজশাহী এবং নিকটতম মসলার মোকাম চান্দাইকোনা, উল্লাপাড়া, চাঁচকৈড় থেকে যে দামে পাইকারি দরে মসলা কিনেছি তা থেকে চলতি সপ্তাহে প্রকারভেদে সকল প্রকার মসলা পণ্যের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আবার বগুড়ার মসলা ব্যবসায়ী মহাজন সাত্তার ও জগদিশকে মসলার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, মসলা আমদানীতে ডলারের দাম বাড়ার কারণটি প্রধান। কেননা বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে মসলার দাম বাড়ছে। তাহলে আমরা কি করবো।
অপরদিকে তাড়াশ গুলটা হাটে মসলা কিনতে আসা কৃষক মুকুল হোসেন বলেন, বিগত বছর গুলোতে কোরবানির ঈদের আগেই সকল প্রকার মসলার দাম বেড়ে যায়। এটা ব্যবসায়িদের কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে হয়। যার মূল্য গুনতে হয় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের। আর তাই যদি না হবে তাহলে ঈদের পর পরই আবার মসলার দাম এমনিতেই কমে যায় কিভাবে?
এ প্রসঙ্গে, তাড়াশ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. খালিদ হাসান বলেন, চলনবিল একটি বৃহত এলাকা। তবে আমার কাজ এখন, এলাকার হাট- বাজারে আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে দ্রব্য মূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা অব্যহৃত রেখেছি।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ