বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

ফেসবুকে প্রেম: ঘুরতে এসে ধর্ষণের শিকার কিশোরী, গ্রেফতার ৮

প্রকাশনার সময়: ২৪ মে ২০২৪, ২১:১৭

৬ মাস আগে ফেসবুকে পরিচয়ে প্রেম। এই প্রেমের সুবাদে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা ব্রিজের নিচে ঘুরতে আসেন প্রেমিকা সুরাইয়া বেগম ও প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাসসহ প্রেমিকের একজন বন্ধু। তারা কিশোর বয়সী। ঘুরতে এসে প্রেমিক ও এক ছিনতাইকারীর ধর্ষণের শিকার হন ওই কিশোরী প্রেমিকা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় ভৈরব মেঘনা রেল ব্রিজের পাশের একটি ঝোঁপে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযুক্ত প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস ও ছিনতাইকারী নির্জন ওরফে আরিয়ান সহ সহযোগী আরও ৬ জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরির বাড়ি জেলার কটিয়াদি উপজেলার নিলক্ষী হাফানিয়া গ্রামে। অভিযুক্ত প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস (১৮) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের মনিন্দ্র দাসের ছেলে এবং নির্জন ওরফে আরিয়ান (১৭) ভৈরব শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মুকসুদ মিয়ার বাড়ির সুমন মিয়ার ছেলে।

ধর্ষণে সহযোগিতা করায় গ্রেফতার ৬ কিশোর হলো- প্রেমিকের বন্ধু পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু মিয়ার ছেলে রাব্বি (১৯), ভৈরব শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার সুজন মিয়ার ছেলে সান (১৭), একই এলাকার আংগুর মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (১৮), শহরের কমলপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে পাপন (১৮), শহরের চন্ডিবের এলাকার মিলন মিয়ার ছেলে হাসান (১৭), একই এলাকার আনাছ মিয়ার ছেলে ফুয়াদ (১৯)।

জানা গেছে, গ্রেফতার ৮জনের মধ্যে প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস ও ছিনতাইকারী আরিয়ান ধর্ষণ করেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই কিশোরী। আর অন্য ৬ জন কিশোর ওই অপরাধের সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই ভুক্তভোগীর বাবা রহমত আলী বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি মামলা করে। মামলার পর শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে অভিযুক্তদের কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায় ভৈরব থানা পুলিশ এবং ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগীকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পলাশ চন্দ্র দাসের পরিচয় হয় ওই প্রেমিকা কিশোরীর। বৃহস্পতিবার তারা ফোনে যোগাযোগ করে প্রথমে ভৈরবের মানিকদী কালি নদী সেতু সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টে আড্ডা কথাবার্তা শেষ করে বিকেলের দিকে মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে আসে। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ব্রিজের পাশে থাকা একটি জঙ্গলের ঝোপে প্রেমিক পলাশ দাস প্রেমিকা ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষণের ঘটনাটি দেখে ফেলে ওই এলাকায় অবস্থানরত কয়েকজন ছিনতাইকারী। তারা প্রেমিক প্রেমিকাকে আটক করে দুটি মোবাইলসহ তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারী নির্জন ওরফে আরিয়ান জোরপূর্বক ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এসব ঘটনায় আরিয়ানকে সহযোগিতা করেন অপর সহযোগী ছিনতাইকারীরা।

কিশোরীর কান্না চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। পরে প্রত্যক্ষদোর্ষী লোকজন পুলিশকে খবর দিলে সাথে সাথে ভৈরব শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কামাল মিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিম কিশোরিসহ ৮জনকে আটক করে ফাঁড়ি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ঘটনা সমাধানের জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করছেন অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন। এসময় ওই ভুক্তভোগী কিশোরীকে বুঝিয়ে ও তার কাছে মাফ চেয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ারও চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি সাংবাদিকরা অবগত হওয়ায় রাত ৯টার দিকে শহর ফাঁড়ি থেকে ভৈরব থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে ওই কিশোরী পুলিশের সামনে ধর্ষণের অভিযোগে চিহ্নিত করেন ছিনতাইকারী আরিয়ানকে। কিন্তু প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাসের ধর্ষণ করছে সেটা অস্বীকার করে প্রেমিকাকে মামলা থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে ওই কিশোরী। এসময় আটককৃতদের ভাষ্য ও স্বাক্ষীর পর ওই কিশোরী স্বীকার করেন তাকে পলাশ ও আরিয়ান দুইজন ধর্ষণ করেছে।

কিশোরী ও আসামিদের অভিভাবকরা রাত ১০টায় থানায় গিয়ে তদবীর করেন। শেষ পর্যন্ত কিশোরীর বাবার রহমত আলী বাদী হয়ে রাত ১২টায় ভৈরব থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। ওই মামলায় ধর্ষণের অভিযুক্ত করা হয় দুজনকে এবং অপর ৬জনকে অপরাধে সহযোগিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় তার অফিস রুমে মীমাংসায় বসতে পারে কিনা এ বিষয়ে ভৈরব শহর ফাঁড়ির ইনচার্জকে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে তিনি ফাঁড়িতে আসতেছেন। ঘটনাটি তিনি অবগত আছেন কিন্তু তার রুমে মীমাংসা করতে বসেছে সেটা জানে না তিনি। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় মীমাংসার কোনো সুযোগ নাই। অবশ্যই মামলা হবে অভিযুক্ত বিরুদ্ধে।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে পরিচয়ে মেঘনা পাড়ে ঘুরতে এসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কয়েকজন ছিনতাইকারী জড়িত রয়েছে। এব্যাপারে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে রাতেই থানায় একটি মামলা করে।

ভুক্তভোগীকে আজ শুক্রবার ডাক্তারী পরীক্ষা করতে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং আসামিদেরকে কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারের রিপোর্ট পাওয়ার পর আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ