ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

কলাপাড়ায় ‘জেলে কার্ডের’ চাল পাচ্ছে মেম্বারের ভাড়াটিয়া

প্রকাশনার সময়: ২১ মে ২০২৪, ১২:২৭

মসজিদ ছুঁয়ে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেই পাওয়া যাবে সরকারি চালের স্লিপ। আর জাটকা ধরা বন্ধে জেলেদের মধ্যে নিয়মানুযায়ী ৮০ কেজি করে (ভিজিএফ) চাল প্রদানের কথা থাকলেও মেম্বারের অনুসারীরাই কেবল পাচ্ছেন সঠিক ওজনের চাল। ইউপি নির্বাচনে বিরোধিতা করেছেন এমন জেলেরা পাচ্ছেন মাত্র ৪০ কেজি। আর জেলে পেশায় নিয়োজিত নয় এমন শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে চাল বিতরণের অভিযোগ থাকলেও মেম্বারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না নিরহ জেলেরা। এ ছাড়া ওই ইউপি সদস্যের ফসলি খেতে ডাল তোলার কাজে নিয়োজিত এমন মানুষকে ঘরে বসেই চালের স্লিপ দিচ্ছেন মেম্বার। কারও কোনো তোয়াক্কা না করেই দীর্ঘদিন ধরে এ কর্মকাণ্ড করছেন এ ইউপি সদস্য, এমন শতাধিক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

পটুয়াখালীর মহিপুর সদর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডর সদস্য মো. সোবাহান। স্থানীয়দের কাছে বানরা সোবাহান নামেই পরিচিত। তবে জেলে সহায়তা বণ্টনে অনিয়ম আর নিজস্ব ভাড়াটিয়াদের মধ্যে তালিকাবিহীন চাল দিয়ে গোটা বন্দরজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলায় জেলে কার্ড নিয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও আছে এ মেম্বারের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২০ মে) সরেজমিন গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভুক্তভোগীকে চাল দেওয়ার আশ্বাস দেন এ ইউপি সদস্য।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শতাধিক জেলেদের অভিযোগ, মহিপুর ইউনিয়নের নজীবপুরে ওই মেম্বারের ওয়ার্ডেই প্রতিবার ঘটছে এমন অনিয়মের ঘটনা। ভুক্তভোগী ইলিশ শিকারি জেলে জালাল ফরাজী বলেন, ২৬ বছর ধরে সমুদ্রে মাছ শিকারে নির্ভরশীল তিনি। মেম্বার সোবাহান একবার চাল দেওয়ার কথা বলে পাঁচ বছর আগে তার জেলে কার্ড নিয়ে গেছেন। এরপর থেকে তাকে আর কার্ড ফেরত দেননি। তার অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকলেও তাকে ইচ্ছে করে বঞ্চিত করছেন সোবাহান।

এফবি সজীব ট্রলারের মাঝি জাকিরের অভিযোগ, তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু তাকেও চাল দেওয়া হচ্ছে না বহুদিন।

এদিকে তালিকাভুক্ত জেলেদের চাল না দিয়ে মেম্বারের ঘরের ১৫০০ টাকার ভাড়াটিয়া মাহিনুর বেগমকে চালের স্লিপ দিয়েছেন। জানতে চাইলে ওই নারী জানান, ‘আমি মেম্বারের বাসায় ভাড়া থাকি। মামানি (মেম্বারের স্ত্রী) এ রকম একটা কইরা স্লিপ আমাগো দেন।’

তবে এ নারীকে দেওয়া স্লিপে লেখা রয়েছে সোহেল নামে অন্য এক জেলের নাম। স্থানীয় সুমনের অভিযোগ, তার নামেও জেলে কার্ড রয়েছে। তবে আর্থিক সচ্ছালতা থাকায় আমি কখনও চালের দাবি করিনি। কিন্তু মেম্বার সোবাহান সেসব মানুষকেই চালের স্লিপ দেয় যারা মসজিদ ছুয়ে তাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার জমিতে যারা ডাল তোলে তাদেরও দিচ্ছে ভিজিএফ সুবিধা। ফলে প্রকৃত জেলেরা সরকারি এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে সংবাদ কর্মীদের বসতে বলেন। তবে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, বিষয়গুলো শুনতে দুঃখজনক। আমদের তরফ থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, জেলেদের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ জেলেদের চাল ভিন্নখাতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

নয়াশতাব্দী/জিএস/একে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ