দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী রাজনীতিতে বিভেদ ও কোন্দল আরও মাথাচাড়া দিয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মতোই তিন খন্ডে ভাগ হয়ে গেছেন দলের নেতাকর্মীরা। মূলত তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরেই ভিন্ন ভিন্নভাবে অবস্থান নিয়েছে মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তৃণমূলের কর্মীরা। তারা মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও প্রকট হতে পারে।
এদিকে প্রার্থীদের দাবী, উন্মুক্ত নির্বাচনের সুযোগে দলের মধ্যেই একাধিক প্রার্থী হয়েছে। যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই সেহেতু ভোটারদের কাছে ব্যক্তি ইমেজই গুরুত্ব পাবে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। নির্বাচনে তিন পদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদ নিয়েই সবার আগ্রহ তুঙ্গে। সে আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তিন প্রার্থী। কেননা, প্রার্থীদের সকলেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। সবার মধ্যেই তৈরি হয়েছে বিভাজন। সে বিভেদ-বিভাজন আরও মাথাচাড়া দিয়েছে ভোটের মাঠে।
এ উপজেলায় টানা তিনবারের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এর আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় আনারস প্রতীক নিয়ে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। একইসাথে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে। এবারের নির্বাচনে শুরুর দিকে অনেকটা নীরব ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রচারণার মধ্যভাগে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরি জিপুর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন আসাদুল হক বিশ্বাসের সাথে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন ইউনিটের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরাও রয়েছেন তার সাথে। তাদেরকে সাথে নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন আসাদুল।
জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক। এবারই প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। জেলা কৃষকলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন। শহরের বিশিষ্ট এ ব্যবসায়ী দলীয় রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে থাকলেও ভোটের রাজনীতিতে একেবারে নতুন। তবে, মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হককে সমর্থন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ।
এতেই তার পালে লেগেছে হাওয়া। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চালাচ্ছেন প্রচারণা। প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এছাড়া প্রচারণায় নেমেছেন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে আরেক হেভিওয়েট জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার। গত উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবারও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তিনি। তবে তিনি অনেকটাই জোটহীন। যুবলীগের নেতাকর্মী ছাড়া তার পক্ষে প্রকাশ্যে অন্য কোন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়নি। যুবলীগের কর্মীদের সাথে নিয়েই চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার মাঠ।
রাজনীতির এসব সমীকরণ ছাপিয়ে, ভোটাররা প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজকেই গুরুত্ব দিবেন বলে মনে করেন প্রার্থীরা। ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, একেকজন একেক প্রার্থীকে ধরে আছে। একেকজন একেক নেতাকে ধরে আছে। যে যেভাবে পারে সেভাবে সবাই সবাইকে ব্যবহার করছে। আবার অনেকে সাধারন মানুষকে ধরে আছে, অনেকে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছে। যার ব্যক্তি জনপ্রিয়তা আছে তিনিই বিজয়ী হবেন। অন্য কাউকে ধরে ভোট করে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না।
মোটরাসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সবথেকে শক্তিশালি এবং সংগঠিত দল। আওয়ামী লীগ কোনদিন হারে না। আওয়ামী লীগের জনসমর্থন সবখানে। সুতরাং এ দলের নেতকর্মীরা যখন আমার সাথে আসছেন, মানুষের কাছে যাচ্ছেন তখন তো মানুষ উজ্জীবিত হবেই এবং তাই হচ্ছে।
আরেক প্রার্থী আনারস প্রতীকের আসাদুল হক বিশ্বাস বলেন, এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের ভেতর থেকেই অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। এটি দলীয় সিদ্ধান্ত। তাই এবারের নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীর আদর্শ, চরিত্র, সততা যাচাইরে সময় এসেছে। এর মধ্যে আমিই পরীক্ষিত প্রার্থী। কেননা, এর আগে টানা ২১ বছর পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান ছিলাম পরে ১৫ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি। এজন্য আমার ওপর জনগণের আস্থা আছে।
এদিকে, দলের মধ্যে জল ঘোলার বিষয়ে তৃণমূলের অনেক কর্মীই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে তিন খন্ড আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও মাথাচাড়া দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই তিন পক্ষ কখনো একত্রিত হতে পারবে কিনা তাই এখন শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৯ জন।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ