জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনি উস্কানিমূলক বক্তব্যের দায়ে বরখাস্ত হওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়ে স্বপদে বহাল রয়েছেন বিতর্কিত সেই অধ্যক্ষ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে চেয়ার দখল করে পূর্বের মতোই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন পিংনা সুজাত আলী (ডিগ্রি) কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ। এমনকি জেলহাজতে থাকা দিনগুলোর বেতনেও তিনি যথারীতি স্বাক্ষর করে মাসিক বিল (এমপিও) জমা দিয়েছেন ব্যাংকে।
কলেজ সূত্র জানায়, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে তার উপস্থিতিতে ২৩ এপ্রিল রাতে পিংনা ইউনিয়নের নির্বাচনি পথসভায় সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ প্রতিপক্ষের লোকদের দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ২৭ এপ্রিল দুপুরে গ্রেপ্তার ও জেলহাজতে যান ওই অধ্যক্ষ। এমনকি প্রার্থীর উপস্থিতিতে এমন বক্তব্য দেয়ায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল হয়। উচ্চ আদালতে গিয়ে রফিকুল ইসলাম প্রার্থিতা ফিরে পেলেও ৮ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি।
অপরদিকে বিতর্কিত বক্তব্য ও জেলহাজতে যাওয়ায় সাইদুল হাসানকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১-এর ১৯ ধারা মোতাবেক ২৭ এপ্রিল হতে অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিংবডি) সভাপতি ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. সিদ্দিকুর রহমান। একইসাথে কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে সাইদুল হাসান বৃহস্পতিবার (৯ মে) জেলহাজত থেকে জামিনে বের হন। গভর্নিংবডির সভাপতি বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করে হজ পালনের জন্য সৌদিআরব গমন করার সুযোগে জামিনে এসেই বরখাস্তের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন সাইদুল হাসান। শনিবার (১১ মে) উপবৃত্তি সংক্রান্ত কলেজের ৩৭ নম্বর নোটিশে স্বাক্ষর ও স্টাফ কাউন্সিলের বৈঠক পরিচালনা, সোমবার (১৩ মে) দুর্ঘটনাকবলিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য সংক্রান্ত ৩৮ নম্বর নোটিশে স্বাক্ষর এবং বিগত মাসিক বেতনের (এমপিও) ফাইলেও তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এমনকি এপ্রিল মাসের শেষ তিনদিন তিনি জেলহাজতে থাকলেও সেগুলোরও বিল তৈরি করে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে কলেজশিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল হোসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন। তিনি জানান, পাঁচদিনের রিমান্ড ও হাজতবাস করেও বিতর্কিত অধ্যক্ষ স্বপদে বহাল থাকার চেষ্টা করছেন। এতে কলেজের আর্থিকসহ সার্বিক জটিলতা, জনমনে বিভ্রান্তি ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সরিষাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মো. হামিদুর রহমান বলেন, সুজাত আলী (ডিগ্রি) কলেজের মাসিক বিল অধ্যক্ষ সাইদুল হাসানের স্বাক্ষরেই জমা দিয়েছেন। এছাড়া তার নিজের বিলও বিগত মাসের ৩০ দিনেরই উল্লেখ করেছেন। ইতোমধ্যেই নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে বেতনও জমা হয়ে গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজাত আলী (ডিগ্রি) কলেজের অধ্যক্ষ (সাময়িক বরখাস্ত) সাইদুল হাসান সাইদকে মুঠোফোনে কল করা হলে 'ব্যস্ত আছি' বলে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ