৫ বছর বয়সেই বাবা হারিয়েছেন আহসান হাবীব। তারপর থেকে মাসহ ঠাঁই হয়েছে নানার বাড়িতে। নানার অভাবের সংসারে পাননি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা। বসতভিটা ছাড়া নেই কোনো আবাদি জমি তাদের। অন্যের জমিতে কাজ করেই দিনাতিপাত করতে হয়। সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তা করে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন হাবীবের মা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেও মায়ের সাথে মাঠে কাজ করেছে হাবীব।
যখন থেকে নিজেকে বুঝতে শুরু করেছে হাবীব তখন থেকে দেখে অবিরত মায়ের ছুটে চলা। মায়ের কষ্ট লাঘবে দুচোখ ভরা স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হবার। দেশের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন হাবীব। যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে তার মার। সেখানে এত টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের সিদ্দিকা বেগমের সন্তান আহসান হাবীব। বাড়ির পাশে জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আহসান হাবীবের এমন অর্জনে যখন এলাকার মানুষদের মাঝে প্রশংসার ফুলঝুরি অন্যদিকে দিনরাত পরিশ্রম করেও টাকার জোগান দিতে পারছেন না তার মা।
ছোটবেলা থেকেই মায়ের সাথে কাজে যেতেন আহসান হাবীব। কখনো টিউশনি করাতেন, কখনো কৃষি জমিতে কাজ করতেন, আবার কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে জুগিয়েছেন নিজের পড়াশোনার খরচ। ভালো ফলাফল করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডার হবার স্বপ্ন তার দু'চোখ জুড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, তার মা তাকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন। সে নিজেও অনেক অভাবের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। নিজে মাঠে ও শ্রমিকেরও কাজ করেছে। তারপরও তার ভালো ফলাফল। আমরা চাই সে যাতে থেমে না যায়। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সেই সাথে সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা যাতে এগিয়ে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবীব বলেন, ছোটবেলা থেকে অভাবের সাথে বোঝাপড়া করে বড় হয়েছি। মায়ের সাথে মাঝেমধ্যে নিজে কাজ করেছি। পড়াশোনায় স্যারেরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু এত টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সরকার এগিয়ে আসলে পড়াশোনা শেষ করে মায়ের কষ্ট লাঘব করব। পাশাপাশি দেশ ও দশের জন্য কিছু করব।
হাবীবের মা সিদ্দিকা বেগম বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পর আমিই তার বাবা আমিই তার মা। রাতভোর মাঠে খাটছি তার ভবিষ্যত ভালো হবার আশায়। কিন্তু যা রোজগার করি তাতে খেয়ে চলে যায়। জমানো কোনো টাকা নেই বা এমন কিছু নেই যা বিক্রি করে তাকে ভর্তি করাব। সে নিজে অনেক পরিশ্রম করে আজ এতদূর পর্যন্ত গেছে। যদি আমার সন্তানের পাশে কেউ দাঁড়ায় তবে সম্ভব তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এই ভর্তির টাকা নিয়ে দিনভর দুশ্চিন্তায় সময় কাটে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, অর্থের অভাবে কোনো মেধাবী ঝরে পড়তে পারে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ