বিদ্যুতের ব্যবহার মানবজীবনে অপরিহার্য। তবে অসাবধানতা ও উদাসীনভাবে এই বিদ্যুতের ব্যবহার কেড়ে নিতে পারে মানুষের প্রাণ। আর এমনটাই ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া ইউনিয়নের একটি স্কুলে। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে বেল্লাল হোসেন (১৬) নামের এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (১২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ছাদে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বেল্লাল কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও দাস পাড়া ইউনিয়নের তাজউদ্দিন মৃধার ছেলে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বেল্লাল স্কুল খোলার পরে বেশ কয়েকদিন দিন ক্লাসে আসেনি। সে কারিগরি শাখার ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষার্থী। স্কুল ছাদের উপর থেকে কালাইয়া এলাকার বিদ্যুতের প্রধান সংযোগটি নেয়া হয়েছে। এদিকে স্কুলের প্রধান গেইটের বাইরে তিনজন ব্যবসায়ী বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে দোকান উঠিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের টিভির সংযোগ আকাশের এন্টিনা লাগিয়েছে স্কুলের ছাদে। এন্টিনার ওই কাজ দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয় বেল্লাল। তখন শব্দ শুনতে পেয়ে সহপাঠিরা ছুটে আসেন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালাইয়া বাজার সহ আশপাশের অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগের প্রধান লাইনটি রয়েছে স্কুলের ঝুঁকিপূর্ণ দূরত্বে। বিগত পাঁচ বছর ধরেই বিদ্যুৎ সংযোগটি এভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সংযোটি রয়ে গেলেও বিদ্যুৎ অফিসের খেয়ালীপনাতে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সংযোগটি সরানো হয়নি। এ ছাড়াও এই স্কুলের ছাদের কাছ থেকে স্থানীয় ডিস ব্যবসায়ী ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা নিয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। কয়েকজন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যক্তিগত কাজের জন্য স্কুলের ছাদটি ব্যাবহার করছে দীর্ঘ দিন ধরে। তবে এসব বিষয় স্কুল কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও তারা খুব একটা আমলে নেয়নি।
স্কুল ভবন নির্মাণের সময় বিদ্যুৎ সংযোগটি সরানো বিষয়ে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে দায় সারা আবেদন করে ভবনটির নির্মাণ শেষ করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন অবৈধভাবে দোকান উঠিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে ও তারা স্কুলের ছাদকে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে।
বিদ্যুৎ সংযোগটি স্কুল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে হয়তো বেঁচে যেত একটি প্রাণ। তবে স্কুল শিক্ষার্থীর বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর দায়টি কার এমন প্রশ্নের জবাবে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক শিরিন শারমিন বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের স্কুল ভবনটি নির্মাণের আগে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগটি নিরাপদ দূরে সরানোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করেছি। পরে আমাদের ভবন নির্মাণ শেষ হলেও সংযোটি সরানো হয়নি। স্কুলের ছাদে ওঠার মতো কোন ব্যবস্থা ভবনটিতে নেই তাই বিদ্যুৎ সংযোগের সরানোর ব্যাপারে পরবর্তীতে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর আমাদের স্কুলের জায়গায় তিনটি দোকান উঠানো হয়েছে অবৈধভাবে। এইসব অবৈধ ব্যাবসায়ীরা কিছুদিন আগে স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থায় ছাদে তাদের আকাশ সংযোগ বসায় যেটি আমাদের জানা ছিল না। এলাকার ক্ষমতাধর কিছু লোক এসব ব্যাবসায়ীদের এখানে বসিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আর এই ব্যবসায়ীদের আকাশ সংযোগের কাজ করার জন্য কয়েকজন মই দিয়ে স্কুলের ছাদে উঠে কাজ করতে ছিল। বেল্লাল উৎসুক হয়ে সেই কাজ দেখতে আগে থেকে রাখা মই বেয়ে ছাদে উঠলে বিদ্যুৎ লাইনে পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। তবে স্কুলের সামনে দোকান অপসারণের বিষয় আমরা আগে কোন পদক্ষেপ নিতে পারি নাই। তবে আজকে তাদের ব্যাপারে ইউএনওকে জানানো হয়েছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগটি নিরাপদ দূরত্বে সরানোর আবেদন করলেও কেন পাঁচটি বছরে সরানো হলো না এ বিষয়ে বাউফল পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এজিএম প্রকৌশলী গনন সাহা বলেন, আমাদের এই সংযোগটি স্কুল নির্মাণের অনেক আগে নেয়া হয়েছে। আসলে এই এলাকাটি এমন যে বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে অন্য কোথাও বসানো খুব একটা সহজ কাজ না। তবে যখন স্কুলের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে তার অনেক পরে আমার পোস্টিং এখানে হয়েছে। আর এখন তখনকার সময়ের কোনো কর্মকর্তা আছে কি না আমি জানি না। তাই এই বিষয়টি আমি বলতে পারছি না।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সনিত কুমার গায়েন জানান, বিদ্যুৎপৃষ্টে স্কুলছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আসল কারণ বের করে আদালতে রিপোর্ট দেয়া হবে।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী জানান, স্কুল প্রাঙ্গণে অবৈধভাবে দখল করা সকল স্থাপনা দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ