জীবিকার তাগিদে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে শূণ্য হাতে আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় আসেন ওসমান। প্রথমে দিনমজুরের কাজ, এরপর শুরু করেন বাসা বাড়ির উচ্ছিষ্ট ময়লা পরিষ্কারের কাজ। পরে সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে সড়কের জায়গা দখলে নিয়ে গড়ে তোলেন ময়লার বিশাল ভাগাড় ও ট্রাকস্ট্যান্ড। সড়কের জায়গা ভাড়া দিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে ময়লার ব্যবসা ও ট্রাকস্ট্যান্ড টিকিয়ে রাখতে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাস বাহিনী। সাথে নিয়েছেন নিজের ২ ছেলেকেও। কিনেছেন ৪৩ লাখ টাকা দামের লেটেস্ট মডেলের প্রিমিও প্রাইভেটকার। শুই তাই নয়,বাড়ি ভাংচুর, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে নাম জড়িয়ে অদৃশ্য ছোঁয়ায় ধীরেধীরে জিরানী এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছে ওসমান।
আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে যারা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন তাদের বাড়িঘরেও সওজের সাথে আতাত করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর অভিযোগ আছে ওসমানের বিরুদ্ধে। সওজের নয়ারহাট শাখার এসও শহীদ এবং সুপারভাইজার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেও আছে ওসমানকে সহযোগীতা করার অভিযোগ। উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় তাদের সাথে ওসমান বাহিনীকে অংশ নিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে চলে গেলে উদ্ধার হওয়া সেই জমি ও ঘর নতুন করে নিজের আয়ত্বে নেন ওসমান।
আশুলিয়ার জিরানীর নবী টেক্সটাইল ও চক্রবর্তী এলাকার মাঝামাঝি স্থানে নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপদের প্রায় তিন একর জমি দখল করে ময়লার ভাগার গড়ে তুলেছেন ওসমান। পাওয়ারট্রিলার ও ট্রাকসহ প্রায় শতাধিক গাড়িতে করে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন এখানে ময়লা ফেলা হয়। ময়লার গাড়ি চালকদের সূত্রে জানা যায়,ছোট গাড়ি থেকে মাসিক ৫ হাজার আর বড় গাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা ওসমানকে দিতে হয়। এতে প্রতি মাসে ময়লার ভাগার থেকেই আসে প্রায় ১০লাখ টাকা।
ময়লার দূর্গন্ধ আশেপাশের প্রায় আধা কিমি এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। দূর্গন্ধের তীব্রতায় নাক চেপে যাতায়াত করতে দেখা যায় পথচারীদের। এলাকায় বসবাসরত ভাড়াটিয়ারাও এলাকা ছেড়ে চলে যান। মরিয়ম নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, নবী টেক্সটাইল এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে চক্রবর্তী একটা কারখানায় চাকরি করি।প্রতিদিন এইপথে যেতে হয়।ময়লার গন্ধে আসা যাওয়া খুবই কষ্ট হয়। এইমাসে এই এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যাব।
নবী টেক্সটাইল এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপদের উদ্ধার করা জমি দখলে নিয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড করেছে এই বাহিনী। এই স্ট্যান্ডে মাসিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে ৭২ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাখা হয় বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এছাড়া ১৫০ টাকা দৈনিক চুক্তিতেও বেশ কিছু গাড়ি রাখা হয়। ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে মাসে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আসে ওসমানের কাছে।
ট্রাকস্ট্যান্ডে লাইনম্যানের দায়িত্বে থাকা সবুজ বলেন, ‘আমাদের এখানে মাসিক ৩৫০০ টাকা চুক্তিতে ৭২ টি গাড়ি রাখা হয়। আর ১৫-২০টি গাড়ি আছে তাদের কাছ থেকে দৈনিক ১৫০ টাকা করে নিই। এই জমির মালিক ওসমান ভাই, আমি লাইনম্যানের দায়িত্বে আছি। টাকা পয়সা আমি তুলি।’
একই এলাকায় ময়লার ভাগারের বিপরীত পাশে জ্যোতি ফিলিং স্টেশনের পিছনে সওজের প্রায় একবিঘা জমি অবৈধ ভাবে দখলে রাখার অভিযোগ আছে ওসমানের বিরুদ্ধে। ওই জমিতে টিনসেড ঘর আগে থেকেই ছিল। ওসমানের লোকজন ওই ঘর কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এত দখলদারিত্বের পরও অদৃশ্য কারণে ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের।
কিশোরগঞ্জ বাড়ি হওয়ার সুবাদে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে বীরদর্পে চলে সে। নবী টেক্সটাইল এলাকার মৃত মুন্নাফের ছেলে দেলোয়ারের ছত্রছায়ায় আর সড়ক ও জনপদের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ময়লা ওসমান।
স্থানীয় বাসিন্দা জ্যোতি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মো. হেদায়েত উল্যা বলেন, ‘আমাদের সাথে সওজের মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে। এ বিষয় নিয়ে মামলা চলমান। আমাদের পক্ষে আদালতের স্টে অর্ডার আছে। স্টে অর্ডার অমান্য করে এসও শহীদের নির্দেশে সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম দাঁড়িয়ে থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এ সময় পাঁচটি বাড়ি ভাংচুর করে দখলে নেয় তারা। তখন ওসমানের সাঙ্গপাঙ্গরাও উপস্থিত ছিল। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই কিন্তু ওসমান সন্ত্রাসী ভাবসাব নেয়। তার ভয়ে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।’
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নয়ারহাট শাখার সেকশন অফিসার (এসও) শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ‘আমরা এস্টে ওয়ার্ডার থাকা জমিতে অভিযান চালাইনি। আর ওসমানকে আমি মৌখিক ভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড করতে বলেছি। ট্রাকস্ট্যান্ড তো রাস্তার পাশে অনেকই আছে। টিনসেট ঘরে আমাদের কিছু লোক থাকে, ওসমানের লোকও থাকে। ময়লার ভাগাড় নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন সাথে একটু জটিলতা আছে ফলে উচ্ছেদ করতে পারছিনা।’
ওসমান বলেন, ‘আমার ব্যাপারে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন আমি কেমন মানুষ। ট্রাকস্ট্যান্ডে দিনে গাড়ি রাখিনা, রাতে কিছু গাড়ি রাখি। ওখান থেকে পোলাপানের কিছু খরচ আসে। টিনসেট ঘরে আমার কয়জন লোক থাকে শহীদ স্যারদের কিছু লোক থাকে। আর ময়লার এখানে অনেক খরচ,দুটা ভেকু আছে। লোকজন আছে। তাদের হাজিরা দিতে হয়। সরকারি লোকেরা আসে তেমন কিছু বলেনা।’
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ