গত এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এই খরার সময়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বিভিন্ন মাঠে চলছে কৃষকের ধান কাটা। কিন্তু এ মৌসুমে তাপপ্রবাহ অত্যধিক হারে বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষকের ধানে ধরেছে চিটা। ধান পেকে যাওয়ার মুহূর্তে তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় কালীগঞ্জ চলবলা ইউনিয়নে দুহুলী গ্রামে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জমির ধানে চিটা হয়ে গেছে। এ এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, ধান কাটার শেষ সময়ে এসে তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ধানে চিটা হয়েছে। ফলে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক।
সারা বছরের জন্য ঘরে তোলা ফসলে চিটা হয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষক। কালীগঞ্জে চলবলা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রামের কৃষক মদন কুমার বলেন, আমি এবার ১ বিঘা জমিতে বাউধানের চাষ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে প্রথমে ধানের চারা রোপণের পরপরই জমিতে নিয়মিত পরিচর্যা বাড়ায়। চারাগাছ বড় হলে আগাছা পরিষ্কারের পাশাপশি নিয়মিত সার ও ওষুধ ব্যবহার করি। ধান পরিপক্ব হলে জমিতে আরও যত্ন বাড়ায়। ধান হলদে ভাব হলে শুরু হয় তীব্র খরা, গরমের কারণে জমির ধান ধীরে ধীরে চিটা হতে শুরু করে। এ মুহূর্তে বিচলিত হয়ে পড়ি। জমিতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। যেখানে ১ বিঘা জমিতে ৩০-৩৫ মণ ধান পাওয়ার কথা সেখানে ধানে চিটা হয়ে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেকের কম ধান । এ অবস্থায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। সারা বছর ধান দিয়ে আমার সংসার চলে। ভাবছি এ বছর চাল কিনে খেতে হবে।
কালীগঞ্জ চলবলা গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামাল বলেন, এবার তীব্র গরমের কারণে আমার ১০ কাঠা জমির ধানে চিটা লেগেছে। এখন ধান কাটার শ্রমিক সংকট। গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মাঠে আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না। একে তো গরমের কারণে ধানে চিটা আবার শ্রমিক সংকটের কারণে আমরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
লালমনিরহাট কালীগঞ্জে গ্রামের কৃষক নাজমুল ও শফিকুল বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ধান ভালো হয়েছে। তবে ধান কাটার এ মৌসুমের শেষের দিকে গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মাঠের অনেক কৃষকের ধানে চিটা লেগেছে। আমার এবার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। যেখানে বিঘা প্রতি ৫ মণ ধান পাওয়ার কথা কিন্তু এবার গরমের কারণে ধানের ক্ষতি হওয়াতে বিঘাপ্রতি পাচ্ছি ২ মণ। আবার গরমের কারণে ধান কাটার শ্রমিক সংকট চলছে। সব মিলিয়ে নানা সংকটে দিন যাচ্ছে আমাদের।
চলবলা ইউনিয়নের ব্লক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এবার তীব্র গরমের কারণে কালীগঞ্জে চলবলা ইউনিয়নে অনেক কৃষকের ধানে চিটা লেগেছে। যেসব এলাকার কৃষকের ধানে চিটা লেগেছে তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। এবার উপজেলায় ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কিছু এলাকায় গরমের তীব্রতা থাকার কারণে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষির মান বাড়াতে আমরা সব সময় কৃষকদের কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হচ্ছে। কারণ যেকোনো আবহাওয়া ও পরিবেশে আমরা সব সময় কৃষকের পাশে থাকতে চাই।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ