মা ও তার দেড় বছর বয়সী ছোট্ট শিশুর পুরো মাথা মোড়ানে রয়েছে ব্যান্ডেজ দিয়ে। মুখটাই শুধু খোলা। তবে শিশুটি বেঁচে থাকলেও তার মা আর বেঁচে নেই। সেই মৃত মায়ের বুকের উপর শুয়ে ‘মা মা’ করে অনবরত কাঁদছে শিশুটি। কিন্তু মা আর উঠছে না, বেড়ে যায় শিশুটির কান্নার আওয়াজ।
মায়ের মরদেহের উপর শুয়ে অঝোরে কাঁদছে শিশু; এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য কাঁপিয়ে দেয় অনলাইন দুনিয়া। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মা হারা এ শিশুটির কান্নায় কেঁদেছেন হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও স্বজনরা।
শিশুটির কান্নার ছবি ও ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর মর্মাহত হয়েছেন লাখো মানুষ। পাশাপাশি শিশুটির পরিবারকে খুঁজে পেতে করে গেছেন প্রার্থনা। দুর্ঘটনার তিন দিন পর অবশেষে শনিবার (১১ মে) রাতে পরিচয় শনাক্ত হয় নিহত মা ও বেঁচে যাওয়া শিশুটির; রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় মিলে।
নিহত মায়ের নাম জায়েদা (৩২) আর বেঁচে যাওয়া আহত দেড় বছরের ছোট্ট শিশুটির নাম জাহিদ হোসেন। নিহত জায়েদা সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। ভালুকা স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ছেলে জাহিদকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শুরুতর আহত হন মা জায়েদা ও শিশু জাহিদ। পরে তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় জায়েদার মৃত্যু হয়।
শনিবার (১১ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভালুকা হাইওয়ে থানার পুলিশের কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার দিন রাতে তারা রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।
নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই আমরা। থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ ও বোনের দেড় বছর বয়সি শিশু ছেলে মো. জাহিদ হোসেনকে নিতে আমরা ময়মনসিংহে আসছি।
ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাত ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই নারী ও তার শিশু সন্তানকে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান মা মারা যান। তবে আহত শিশুটির চিকিৎসা চলছে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. ফারজানা বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মা মারা গেছেন। এদিকে অবুঝ শিশুটিও অনবরত কাঁদছে। শিশুটির চিকিৎসা আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আল্লাহর মেহেরবানীতে শিশুটি সুস্থ আছে। ওয়ার্ডে কর্মরত কর্মীরা সর্বক্ষণ দেখভাল করছে।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ