ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

এবার ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে রাজশাহীর আম

প্রকাশনার সময়: ১১ মে ২০২৪, ২০:৪৬ | আপডেট: ১১ মে ২০২৪, ২০:৫১

ভরা মৌসুমে ভোক্তার কাছে সতেজ আম পৌঁছে দিতে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় আম পরিবহনে। তাই আম পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করতে আগেভাগেই উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এবার পঞ্চমবারের মতো থাকছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এবার ট্রেনটি চালানো হবে আইকনিক পদ্মা সেতু দিয়ে।

শনিবার (১১ মে) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম।

সেমিনার থেকে আরও জানানো হয়, ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ছেড়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে রাত সোয়া ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। মোট ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে ২৮ দশমিক ৮৩ টন আম পরিবহন করা যাবে। আগামী ১০ জুন থেকে প্রতিকেজি আম মাত্র এক টাকা ৪৩ পয়সা খরচে ঢাকায় পাঠানো যাবে।

জানানো হয়, রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা স্টেশনসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। আর ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে। এ ট্রেনে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৩ পয়সা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজবাড়ী থেকে ১ টাকা ৭ পয়সা, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ পয়সা এবং ভাঙ্গা থেকে পড়বে ৯৮ পয়সা।

এদিনের সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, নিরাপদে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে আম পরিবহনের লক্ষ্যে আগামী ১০ জুন চালু হচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ২০২০ সালে প্রথম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছর মোট ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। এতে সরকারের ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা রাজস্ব অর্জিত হয়েছে। তবে অধিক লাভের কথা চিন্তা না করে আমরা আম পরিবহন ব্যবস্থা আরও নিরাপদ ও সহজ করতে এবং ট্রেনকে জনপ্রিয় করতে চাই। আমরা রাস্তার ওপর চাপ কমাতে চাই। এজন্য যা যা করণীয় তাই আমরা করব। আমরা চাই কম খরচে রেলের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জন্য আম পরিবহন সহজ হোক। কুরিয়ারের বিকল্প হিসেবেই আমরা এটি করতে চাচ্ছি।

এ সময় রেলপথে আম পরিবহনের স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার দিন বলেছিলাম রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই। চাষি ও ব্যবসায়ীদের কম খরচে আম পরিবহনের সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রী এ ট্রেন দিয়েছেন।

এ সময় রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নাটোরের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সর্দার শাহাদত আলী, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মো. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এ ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। এ চার বছরে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে তেলই খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এ কয়েক বছরে ট্রেনের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।

এদিন সেমিনারে উপস্থিত আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা তাদের নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ট্রেনে করে আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাঠাতে খুব কম খরচ হলেও বারবার ওঠানামা করার কারণে ঝামেলা বেশি হয়। গ্রাহক পর্যায়ে ডেলিভারিতেও সমস্যা হয়। এতে অনেক আম প্রায় সময় নষ্টও হয়। তাই সড়কপথ ও কুরিয়ার সার্ভিসকেই বেছে নেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

২০২০ সালের ৫ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬ দিন চলেছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর ট্রেনে এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হলেও কোরবানির পশু পরিবহন হয়নি। ২০২১ সালের ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিন চলেছিল ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ওই বছর দুই হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আম পরিবহন করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ১৩ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সাত দিন চলে এই বিশেষ ট্রেন।

সেই বছর ১৭৯ মেট্রিক টন আম, ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল পরিবহন করা হয়। ২০২৩ বছর ৮ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১৮ দিন স্পেশাল ট্রেন চলেছে। এরপর ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত দুটি ওয়াগন যুক্ত করে কোরবানির পশু পরিবহন করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। ওই বছর প্রতিটি ওয়াগনের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৩০ টাকা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ