রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা রোগির সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বাড়তি রোগীদের স্থান দিতে দফায় দফায় সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিটে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। করোনা রোগীদের চাপ সামাল দিতে বেকায়দায় পড়েছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। সেই সঙ্গে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চলতি মাসেই রামেকে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪০ জন।
রামেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা করোনা রোগীদের স্থান সংকুলান করতে গত এক সপ্তাহে দফায় দফায় ওয়ার্ড ও বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পূর্বে হাসপাতালের ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা ছিল ৩৫৭টি। এর সঙ্গে ৪৮টি শয্যা বেড়ে ৪০৫টি দাঁড়িয়েছে। এরপরেও ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগি বর্তমানে রামেক হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪০৫ জনকে বেড দেওয়া গেলেও বাকিরা হাসপাতালে মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বারান্দায় থেকে কোনরকম চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে রোগির স্বজনদের দাবি হাসপাতালে আরো করোনা বেড বাড়াতে হবে। তা’না হলে রোগিরা সঠিক চিকিৎসা পাবে না। এমনকি চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে পারছে না।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে আরও রেকর্ড সংখ্যক ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টার মধ্যে এসব মৃতদের মধ্যে নয়জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকি ১৬ জন মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজশাহীর ১২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন, নাটোরের পাঁচজন, নওগাঁর দুইজন ও চুয়াডাঙ্গার একজন।
মৃতদের মধ্যে ১১ জনের বয়স ৬১ বছরের উপরে। অন্যান্যদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে চারজন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের তিনজন এবং ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের দুইজন। এনিয়ে চলতি মাসে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ২৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ৩৪০ জন।
শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১০, নাটোরের ৭, নওগাঁর ১১. পাবনার এক, কুষ্টিয়ার এক, সিরাগঞ্জের এক, চুয়াডাঙ্গার এক, ঝিনাইদহের এক ও মেহেরপুরের একজন। সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫০ জন। মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪০৫ বেডের বিপরীতে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৫৯ জন রোগী। অতিরিক্ত রোগিদের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে বেকায়দায় পড়েছেন। নতুন নতুন রোগী বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
রামেকের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগিদের মধ্যে রাজশাহীর ৩০৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫১ জন, নাটোরের ৩১ জন, নওগাঁর ৩৭ জন, পাবনার ২৪ জন, কুষ্টিয়ার তিনজন, চুয়াডাঙ্গার দুইজন, দিনাজপুরের দুইজন, মেহেরপুরের একজন ও ঢাকার একজন। আইউসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮ জন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ মনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করেও রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য হাল্কা উপসর্গ রোগীদের বাসা থেকে চিকিৎসা নেওয়ায় ভালো বলে জানান তিনি।
ঈদের পর থেকে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। শনাক্তের হার ৬০ শতাংশের উপরে উঠলে গত ১১ জুন সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। এর পর দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে লকডাউন আগামী ৩০ জুন মধ্য রাত পর্যন্ত করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ